দেশে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস!


 দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে দেশে মৃতু্যর সপ্তম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। এমন পরিস্থিতিতে রোগটি প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ডায়াবেটিস একবার হলে আর কখনো ভালো হয় না। তবে সুশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই রোগটি নিয়ে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে উদ্বেগ। কারণ এখন পর্যন্ত ডায়াবেটিস আক্রান্ত দুইজনের একজন জানেই না তার শরীরে এ রোগ রয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারে ডায়াবেটিস নিয়ে উদ্বেগ বেশি। আর ইনসুলিন সহজলভ্য করার পাশাপাশি এই রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩৮ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক বিশ্বের ১৯৫টি দেশে ২৫০টি রোগে মৃতু্য ও ভবিষ্যতে কোন রোগে বেশি মৃতু্য হবে তার পূর্বাভাস দিয়েছেন। ওই অনুমিত হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃতু্য হয়েছিল।

আর এই অসংক্রামক রোগে (ডায়াবেটিস) ২০৪০ সালে মৃতু্যর সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হাজার ৭৫০ হবে। অর্থাৎ মৃতু্য দ্বিগুণের বেশি হবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট গত বছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই গবেষণা অনুযায়ী, মৃতু্যর সংখ্যার দিক থেকে সপ্তম স্থানে আছে ডায়াবেটিস। অন্য রোগগুলো হচ্ছে হৃদ্‌?রোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, দীর্ঘস্থায়ী বক্ষব্যাধি, নবজাতকের মৃতু্য ও নিম্ন্ন-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ। তবে ২০৪০ সালে ডায়াবেটিস পঞ্চম স্থানে চলে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) সর্বশেষ সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৪৫ কোটিরও বেশি। অসংখ্য মানুষ ডায়াবেটিস সম্পর্কে অজ্ঞাত। এমনকি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের আকস্মিক মৃতু্যর আশঙ্কা একজন সুস্থ মানুষের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি। ফলে রোগ শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। অশনাক্ত থাকলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

এদিকে আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও জনগণের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ‘ডায়াবেটিস: প্রতিটি পরিবারের যুদ্ধ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ (বাডাস) বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা, মতবিনিময় সভার ও শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এদিন রাজধানীর মগবাজার ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন হয়েছে।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আগত রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিবেন ডায়াবেটিস, হরমোন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ। ক্যাম্পে রেজিস্ট্রিভুক্ত রোগীদের বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা (আরবিএস) করাতে পারবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাবেন। প্রসঙ্গত, আইডিএফ ও বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ১৯৯১ সালের ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *