দেশে প্রতি ঘণ্টায় নিউমোনিয়ায় মারা যায় গড়ে একজন শিশু

দেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া। ২০১৮ সালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১২ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে দেশে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে একজন শিশু মারা যাচ্ছে নিউমোনিয়ায়, যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ প্রকাশিত ‘ফাইটিং ফর ব্রেথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রণীত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড এপিডেমিওলজি এস্টিমেশন গ্রুপের (এমসিইই) অন্তর্বর্তীকালীন হিসাবের ওপর ভিত্তি করে এ বিশ্লেষণী প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউনিসেফ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাময় ও প্রতিরোধযোগ্য রোগ হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কয়েক হাজার বাংলাদেশী শিশু। দেশে গত বছরও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ১২ হাজারেরও বেশি। সে হিসাবে দেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে দৈনিক গড়ে ৩০টিরও বেশি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘণ্টায় গড় শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ১-এর বেশি।

এরই ভিত্তিতে দেশে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে নিউমোনিয়াকে চিহ্নিত করেছে ইউনিসেফ। এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে মৃত্যুবরণকারী শিশুদের ১৩ শতাংশই মারা গেছে নিউমোনিয়ায়।

নিয়মিত টিকাগ্রহণ, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো, পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ কিছু সচেতনতামূলক পদক্ষেপের মাধ্যমেই নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবু তালহা বলেন, অপুষ্টি, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতা, অসচেতনতা—এসব কারণেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নিউমোনিয়া। শিশুদের নিয়মিত টিকা দান, ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে পারলে নিউমোনিয়া অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদিও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে এ রোগটির ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা, আবার মারা যাওয়া শিশুর হারও কম নয়। মূলত শহরাঞ্চল, বস্তি এলাকায় এ রোগের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের ধূমপানের কারণেও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই এসব বিষয়ে সচেতন থাকলে নিউমোনিয়া খুব সহজেই প্রতিরোধ সম্ভব।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মারা গেছে আট লাখেরও বেশি। অর্থাৎ বিশ্বে প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে একটি করে শিশুর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এ আট লাখের মধ্যে যেসব শিশুর বয়স দুই বছরের কম, তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু ঘটেছে বয়স এক মাস অতিবাহিত হওয়ার আগেই।

এতে আরো জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী নিউমোনিয়ায় মৃত শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি মাত্র পাঁচটি দেশের। দেশগুলো হলো নাইজেরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে নাইজেরিয়ায়। দেশটিতে গত বছর ১ লাখ ৬২ হাজার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মারা গেছে ১ লাখ ২৭ হাজার। তৃতীয় পাকিস্তানে গত বছর নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৫৮ হাজার।এছাড়া কঙ্গোয় ৪০ হাজার ও ইথিওপিয়ায় ৩২ হাজার শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

নিউমোনিয়ার কারণ ও চিকিৎসা বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংক্রমণ ও অপুষ্টির কারণে শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণ ও অনিরাপদ পানিসংবলিত এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি। রোগটি টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদিও এখনো বিশ্বের কোটি কোটি শিশুকে এর আওতায় আনা যায়নি। এছাড়া মারাত্মক পর্যায়ের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও দরিদ্রতম দেশগুলোয় এগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। সূত্র বণিক বার্তা

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *