নারীদের হাড়ক্ষয়ের সমস্যা

অস্টিওপোরোসিস বলতে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বোঝায়। হাড়ক্ষয়ের এ সমস্যায় সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। সমস্যা মারাত্মক হলে হাঁচি বা কাশি দিলেও হাড় ভেঙে যেতে পারে। বয়স্ক নারীদের বিকলাঙ্গ বা মৃত্যুর অন্যতম কারণ এটি। বয়স ৫০ বছর পার হওয়ার পর হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এ সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে আরও আগেই। নারীদের মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়ে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এ ছাড়া অনেক কারণে হাড়ক্ষয়ের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে সংশোধনযোগ্য ঝুঁকিগুলো হলো-

১। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি

২। ধূমপান

৩। অপুষ্টি (ক্যালসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে ইত্যাদির ঘাটতি)

৪। ক্ষীণকায় শরীর

৫। আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস

৬। বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/চকলেট খাওয়ার অভ্যাস

৭। খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু

৮। কোমল পানীয় ও মদ্যপান

আবার কিছু ঝুঁকি আছে অসংশোধনযোগ্য, মানে চাইলেও এড়ানো যায় না। যেমন- বয়স, জিনগত ত্রুটি, অস্ত্রোপচার করে জরায়ু ফেলে দিলে, সময়ের আগে মেনোপজ, রক্তে সেক্স হরমোনের ঘাটতি, অতি খর্বাকৃতি ইত্যাদি। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন, হরমোনজনিত রোগ যেমন হাইপারথাইরয়েডিজম, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কিছু বাতরোগ, কিডনি অকার্যকর হলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।

প্রতিরোধের উপায়

প্রাথমিক অবস্থায় হাড়ক্ষয়ের তেমন উপসর্গ থাকে না। বয়স্ক নারীদের কোমরে বা পিঠে ব্যথা না কমলে মেরুদণ্ডের হাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে কিনা দেখতে হবে। কুঁজো হয়ে যাওয়া, সামনে ঝুঁকে দাঁড়ানো বা হাঁটা এ সমস্যার লক্ষণ। রোগীর ব্যক্তিগত ইতিহাস, উপসর্গ মিলিয়ে চিকিৎসক ঝুঁকি নির্ণয় করতে পারেন।

নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সচল থাকতে হবে
যথেষ্ট ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হলো ঝুঁকি শনাক্ত করা এবং সম্ভব হলে তা দূর করার চেষ্টা করা। অস্টিওপোরোসিজনিত ঝুঁকি কমাতে নারীদের জীবনব্যাপী সচেতন থাকতে হবে। কৈশোর থেকেই খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, সচল থাকতে হবে। যথেষ্ট ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কারও সময়ের আগে মেনোপজ হলে (যেমন অস্ত্রোপচার করে জরায়ু ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়ার কারণে) অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা নিন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *