বেসরকারি ক্লিনিকে বাড়ছে মৃত্যু হার

পাবনা জেলায় বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়গনোস্টিক সেন্টার কাম হাসপাতালে মা ও শিশু মৃত্যু এবং ভুল অপারেশনে অঙ্গহানীর ঘটনা ঘটছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সিজিরিয়ান করতে গিয়ে এক প্রসূতি মাতার ইউরিনারি ব্লাডার কেটে ফেলার দুই সপ্তাহ মধ্যে জেলায় আর একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান করার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির অবস্থাও ভালো নয়। ইউরিনারি ব্লাডার কেটে ফেলার ঘটনাটি ঘটে জেলার আমিনপুর থানাধীন কাশিনাথপুর সেবা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনোস্টিক সেন্টারে ২১ আগস্ট দরিদ্র ভ্যান চালক ইশারত আলী তার স্ত্রীকে ঐ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সিজারিয়ান করতে গিয়ে তার স্ত্রী মোহরা খাতুনের ইউরিনারি ব্লাডার কেটে যায়।

দিশেহারা দরিদ্র ইশারত স্ত্রীকে নিয়ে রাজাশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা তার স্ত্রীর ইউরিনারি ব্লাডার অপারেশন করে ঠিক করে দেন। এ ব্যাপারে পাবনার সিভিল সার্জন বলেছিলেন, ভূক্তভোগী অভিযোগ করলে ঐ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ঘটনার জের না কাটতেই পাবনার চাটমোহর উপজেলায় সততা নামের এক ক্লিনিকে আশা রানী দাম নামে এক প্রসূতির সিজার করার পর মৃত্যু ঘটে। গত শুক্রবার তিনি ঐ ক্লিনিকে ভর্তি হন। শুক্রবার তার সিজার করা হয়। তার একটি সুন্দর ফুট ফুটে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। আশা রানী দাসের এটি দ্বিতীয় সন্তান। অপারেশনের পর প্রসূতি মাতার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় কলে আশা সিজার কারনোর সরকারি চিকিৎসক ডলি খাতুন ছিলেন না। তিনি এই অপারেশন করার জন্য নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল থেকে এসে ছিলেন। অপারেশনে পর তিনি চলে যান। ২ নভেম্বর আশা রানী অবস্থা খারাপ হয়ে ওঠে এবং সন্ধ্যায় সততা ক্লিনিকে তিনি মারা যান।

তাৎক্ষনিক চিকিৎসার অভাব আর অবহেলার কারণেই মারা গেছে আশা রানী দাস। ঘটনার পর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্লিনিকটিতে পুলিশ পাহারা ব্যবস্থা করেন সততা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক স্বপন কুমার।

সূত্র মতে, এরপরই উত্তেজিত হয়ে পড়েন তার স্বজনরা। ক্লিনিকের আসবাব-পত্রে লাথি ও দুই একটা চেয়ার ছুড়ে ফেলার ঘটনাও ঘটে। সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরিন ও ওসি শেখ নাসীর উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মৃত আশা রানী দাস চাটমোহর চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা এবং ভবেশ কুমার দাসের একমাত্র কন্যা। ঘরে তার স্বামী, আরও এক ছেলে এবং সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা রইলো।

সততা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক স্বপন কুমার আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমাদের কোন দায়িত্ব অবহেলা ছিল না। রোগী যখন অসুস্থ হয়, তখন আমি ক্লিনিকে ছিলাম না। খবর পাওয়া মাত্র ক্লিনিকে চলে আসি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেই। কিন্তু সময় দিল না। তিনি মারা গেলেন।

চাটমোহর থানার ওসি শেখ নাসীর উদ্দিন জানাচ্ছেন, মৃত্যুর পর ক্লিনিকে উত্তেজনাকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করে পুলিশ। প্রসূতির স্বামী ও বাবা মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপরদিকে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে দৌঁড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন স্বপন কুমার দাস। সুবিধাবাদি একটা চক্র আশার মৃত্যুকে পুঁজি করে স্বপনের কাছে থেকে অবৈধ আয়ের চেষ্টা করছে বলে শোনা যাচ্ছে।

পাবনার সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় লাইসেন্স প্রাপ্ত কিøনিক রয়েছে ৮৮টি। ডায়গনোস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের সংখ্যা ১২৪টি। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকের কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। সূত্র মতে, লাইসেন্সবিহীন পাবনা জেলার আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা নানা নামে ক্লিনিক রয়েছে অন্তত: অর্ধশতাধিক।
প্রসঙ্গত: বেসরকারি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়গনোস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলো ক্লিনিক্যাল অ্যাক্ট মানছে না। এই সব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো আবাসিক চিকিৎসক নেই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কোনো ক্লিনিকে চাকরি সময় শেষে বসে প্র্যাকক্টিস করেন এবং অনেকে কল পেলে ক্লিনিক কাম হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করে চলে যান।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *