মাত্র চার চিকিৎসক দিয়ে চলছে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় ভরসা এখন মাত্র ৪ চিকিৎসক। প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনসাধারণ। ২১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও মাত্র চারজন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে জনসাধারণকে চাহিদা অনুসারে সেবা প্রদান করা যাচ্ছে না। এদিকে রোগীর উপচেপড়া ভিড় সামলাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি আউটডোর ও ইনডোরে সেবা প্রদান করে আসছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। তবে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট ও সরঞ্জামাদি না থাকায় কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যার। ২১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন।নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনিও কিছুদিন হলো বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে এখন তীব্র চিকিৎসক সংকট চলছে। প্রতিদিন আউটডোরে গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। বিশাল এ রোগীর বহর সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ওই চার চিকিৎসককে। তাছাড়া এ উপজেলায় কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল না থাকায় বিশাল এ জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা এ হাসপাতাল। এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ যাবতীয় মেশিনপত্র থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। গত এক বছরেও বেশি সময় ধরে এ হাসপাতালে চলছে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট। শিগগিরই এ হাসপাতালে চাহিদা অনুসারে চিকিৎসক ও জনবল পোস্টিং দেয়ার দাবি এলাকার জনসাধারণের।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। দায়িত্বরত চিকিৎসকদের চারপাশে অসংখ্য রোগীর ভিড়। দম ফেলার সুযোগ নেই চিকিৎসকদের। তবে তারা চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে কর্মরত ফার্মাসিস্ট খাদিজা আক্তার বীথি বলেন, বহির্বিভাগে ৪০০ থেকে ৪৫০ রোগী হয় প্রতিদিন। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এত রোগীর ওষুধ বিতরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
বাহাদিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব দুলাল মিয়া ক্ষুধামন্দা ও শারীরিক অসুস্থতায় সকাল ৯টায় এসেছেন চিকিৎসা নিতে। ১১টায় চিকিৎসক দেখাতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার কম, রোগী মেলা। তাই অনেকক্ষণ সময় লাগলো। তবে ডাক্তার তাকে ভিটামিনের সিরাপসহ অনেক ওষুধ দেয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে পাকুন্দিয়া সুরুজ ব্যাপারী বাড়ির খালেদা আক্তার এসেছেন চিকিৎসা নিতে। তিনিও প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করে চিকিৎসকের দেখা পেয়েছেন। চিকিৎসকের কাছ থেকে ভালো চিকিৎসা ও হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।  

হাসপাতালটির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এটিএম নজরুল ইসলাম জানান, এখানে বিনামূল্যে কালাজ্বর, ডেঙ্গু ও যক্ষ্মা পরীক্ষা করা হয়। তাছাড়া নামমাত্র ফি’তে ডায়াবেটিস, ব্লাড রুটিন, ইএসআর ও হিমোগ্লোবিন টেস্ট করা হয়া হয়। গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী পরীক্ষা করাতে আসেন। একজনের পক্ষে সামাল দেয়া কষ্টসাধ্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডা. জমির মো. হাসিবুস সাত্তার বলেন, এত কম চিকিৎসকের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা, বহির্বিভাগ ও ভর্তি হওয়া রোগীদের সামাল দেয়া খুবই কষ্টকর। এরপর রয়েছে প্রশাসনিক কাজকর্ম, প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সভায় যোগদান, মামলার সাক্ষ্য দেয়াসহ নানা কাজ। তবে যখনই কেউ বদলি হন, তখনই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চাওয়া হয়। চিকিৎসক সংকটের কথা সব সময়ই জানানো হচ্ছে। তবে এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। জেলা সিভিল সার্জন মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জেরও প্রত্যেকটি উপজেলায় চিকিৎসক সংকট আছে। শিগগিরই ৩৯তম বিসিএস নিয়োগ হবে। ওই নিয়োগের মাধ্যমে আশা করছি কিশোরগঞ্জের শূন্যপদগুলো পূরণ হবে।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *