ঘাড় ও কোমরব্যথা সারাবে যন্ত্র

মানুষের হাতে এখন সময় কোথায়? কেউ দিনরাত ছুটছে আবার কেউ সারাক্ষণ বসে বসে কাজ করে চলেছে। হরহামেশা শরীরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে ধকল। অনেক সময় লাগছে আঘাত। তাতে ব্যথা বাড়ছে। চেয়ারে বসে দীর্ঘ সময় কাজ করা থেকেও হচ্ছে কোমরব্যথা, ঘাড়ব্যথা। 

আবার বয়সের কারণে হচ্ছে হাঁটুব্যথা। ব্যথার অনেক ওষুধ আছে বাজারে, কিন্তু তাতে সমস্যা সৃষ্টি হয় লিভারে ও কিডনিতে। ওষুধবিহীন ব্যথা নিরাময়ের জন্য সারা বিশ্বেই বিজ্ঞানীরা নানা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এসবের মধ্যে যে ব্যবস্থাটি গত ছয় দশকের গবেষণায় প্রচুর সফলতা এনেছে, সেটি হলো পাল্​সড ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ফিল্ড (পিইএমএফ) নামে একটি প্রযুক্তি। খুশির খবর হচ্ছে, বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানীর নেতৃত্বে একদল তরুণ গবেষক সম্প্রতি এ প্রযুক্তি নিজেদের মতো করে উদ্ভাবন করে সফলতা পেয়েছেন এবং ‘ইলেকট্রো-হেলথ’ নামে এটি বাজারজাত করছেন। যন্ত্রটিতে বহু পরীক্ষিত ওই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে বলে এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ, এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

দেশে উদ্ভাবিত এই যন্ত্র ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। মডেল: হামিদ, ছবি: অধুনা

একটি চওড়া কাপড়ের বেল্টের মতো দেখতে ইলেকট্রো-হেলথ যন্ত্রটি পোশাকের ওপর পরা যায়, ঘাড়, কোমর, হাঁটু—সব জায়গাতেই এর কার্যকরী অংশটি বসানো যায়। দেশি ইলেকট্রনিকস প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইবিট লিমিটেড ইলেকট্রো-হেলথ বাজারজাত করছে।

অধ্যাপক রব্বানী আরও দুজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীর সঙ্গে ১৯৭৮ সালে ভাঙা হাড় জোড়া দেওয়ার জন্য দেশে এ পদ্ধতির যন্ত্র তৈরি ও ব্যবহার করে তাঁদের গবেষণায় ভালো ফল পেয়েছিলেন। সেই থেকেই এ বিষয়ে তাঁদের কিছু প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিষয়টি নিয়ে আর কাজ করা হয়নি। ইদানীং যখন দেখলেন, তাঁদের সে গবেষণার ওপর লেখা প্রবন্ধটি কয়েক শ বার পড়া হয়েছে, সাইটেশন হয়েছে ৭০ বারের বেশি, তখন খুঁজে দেখলেন যে তাঁদের এ কাজকে উদ্ধৃত করছেন মূলত ব্যথা নিরাময়ের গবেষকেরা। কারণ, সেখানে বলা ছিল যে ভাঙা হাড়ের রোগীরা বলেছিলেন, এ যন্ত্র লাগানোর পর ক্ষতস্থানের ব্যথা কমে গেছে।

এদিকে এক বছর ধরে তাঁর নিজের ঘাড়ে বেশ ব্যথা ছিল, অনেক সময় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারতেন না। নিজের জন্য শুরুতে একটা যন্ত্র ডিজাইন করে ছাত্রদের দায়িত্ব দিলেন বানিয়ে দিতে। তিন দিন ব্যবহার করার পর তাঁর ব্যথা প্রায় চলে যায়। এরপর পরিচিত বেশ কয়েকজনের ব্যথায় এ যন্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করতে দেন। সবাই উপকার পান। তখন তিনি যন্ত্রটি বাজারে আনার পরিকল্পনা করেন। এটি মূলত কোমর বা ঘাড়ের ব্যথায় বেশি উপকারী। তবে এটি হাঁটুব্যথাসহ অন্যান্য কাজেও লাগবে। স্পোর্টস ইনজুরি বা সাধারণ আঘাতে যদি ব্যথা হয়, তবে তা নিরাময়েও এটি কাজে লাগতে পারে।

যন্ত্রটির তিনটি অংশ। একটি তারের কুণ্ডলী, একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র ও একটি ব্যাটারি। ব্যাটারি হিসেবে মুঠোফোনের পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করা হচ্ছে। সব অংশ ভেলক্রো লাগানো একটি বেল্টের ওপর সুবিধামতো জায়গায় আলাদাভাবে লাগানো যায়। যেখানে ব্যথা আছে, সেখানে তারের কুণ্ডলীর অংশটি স্থাপন করতে হয়। কোমরে ব্যথার ক্ষেত্রে বেল্টটি কোমরে জড়িয়ে নেওয়া যায়। ঘাড়ে ব্যথার ক্ষেত্রে কোনাকুনি করে ঘাড় থেকে বুক-পিঠের ওপর দিয়ে ‘স্যাশ’-এর মতো করে পরা যায়। যেকোনো সময় এটা ব্যবহার করা যায়। অফিসে বা বাড়িতে কাজের সময় কিংবা অবসরে, এমনকি ঘুমানোর সময়ও ব্যবহার করা যায়। অল্প কয়েক দিনের ব্যথা দূর করতে আধা ঘণ্টাতেই কাজ হয়ে যেতে পারে। বছরের বেশি বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা করে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে কয়েক দিন লাগতে পারে। ব্যথার ওষুধে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে বলে পিইএমএফ পদ্ধতির চিকিৎসা ওষুধের চেয়ে অনেক গুণে ভালো।

দেশে উদ্ভাবিত এই যন্ত্র ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। মডেল: হামিদ, ছবি: অধুনা

এ ধরনের যন্ত্রগুলো ‘স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার যন্ত্র’ নামে ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ ডিভাইস হিসেবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপণন করে থাকে। এ যন্ত্রে ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রনিক সার্কিট একটি তারের কয়েলের মধ্য দিয়ে মৃদু বৈদ্যুতিক কারেন্টের পাল্​স প্রবাহিত করে, যা শরীরের ভেতরে যথাক্রমে চুম্বকশক্তি ও বৈদ্যুতিক শক্তি তৈরি করে। ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং শরীরকে তার নিজস্ব উপায়ে তাড়াতাড়ি ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।

‘ইলেকট্রো-হেলথ’ যন্ত্রটির দাম আট হাজার টাকা। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় পাওয়া যাবে এটি। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবের কাছে স্কয়ার টাওয়ারে নিজস্ব কার্যালয়ে বেল্ট বিক্রি করছে বাইবিট। বিস্তারিত জানা যাবে বাইবিটের ওয়েবসাইটে (https://bibeat.com)। সূত্রঃ প্রথম আলো।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *