পাস করেও মেডিক্যালে ভর্তি হতে পারবে না প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী

ভর্তি পরীক্ষায় পাস করার পরও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না প্রায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামে ১টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, ৬টি বেসরকারি ও ১টি আর্মি মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৮০৫টি।

১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে প্রতি বছর ২০০ জন শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সে ভর্তি করানো হয়। সঙ্গে কিছু বিদেশী শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়। ১৯৯০ সালের ৫ জানুয়ারি ডেন্টাল ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে প্রতি বছর বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) কোর্সে ভর্তি করা হয় ৫০ জন। সারাদেশে মেধা তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম অনুযায়ী এই সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া চলে।

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম (এএমসিসি) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এমবিবিএস ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কলেজটিতে দুই ধরনের ছাত্র রয়েছে: মেডিক্যাল ক্যাডেট (এএফএমসি) এবং আর্মি মেডিক্যাল কর্পস ক্যাডেট (এএমসি)। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি করা হয় ১০০ জন শিক্ষার্থী।

১৯৮৯ সালের ১৩ মে প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) এর চিকিৎসা অনুষদের অধীনে প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন দেশি ও ২৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম রয়েছে। তবে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ২৫তম ব্যাচে ভর্তি হয় ৪১২ জন, যার মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী প্রায় ২০০। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ২৬তম ব্যাচে ভর্তি হয় ৪১৬ জন, যাদের মধ্যে ১৫২ জন বিদেশি। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ২৭তম ব্যাচে ২৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে বিদেশি ১৩১ জন।

চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে ৫০টি আসন নিয়ে এমবিবিএস কোর্স শুরু হয়। এরপর ২০১৬ সালে ১২৫টি আসন বাড়ানো হয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩৫টি আসন কমিয়ে ৯০টি নির্ধারণ করে দেয়। যদিও ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ৫০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে ২০০৬ সাল থেকে ৫০জন শিক্ষার্থী নিয়ে এমবিবিএস কোর্সের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে প্রতি সেশনে ভর্তি করা হচ্ছে ১০০জন।  

নগরের নাসিরাবাদ এলাকায় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সাউদার্ন মেডিকেল কলেজে শুরুতে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন ছিল। সেটা বেড়ে এখন ৬৫ জন হয়েছে। এছাড়া চন্দ্রনগর এলাকার মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। চান্দগাঁও শমসের পাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী মেডিক্যাল কলেজে (আইআইএমসিএইচ) আছে ৫০টি আসন। এসব মেডিক্যাল কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশ থেকে অংশ নেন ৬৯ হাজার ৪০৫ জন পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) কেন্দ্রের অধীন ৫টি ভেন্যুতে ৬ হাজার ৩৮ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে সারাদেশে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৪১৩ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ২২ হাজার ৮৮২ জন ও মেয়ে ২৬ হাজার ৫৩১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে ২২ অক্টোবর। শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি শেষ হওয়ার পর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে।

দেশের ৩৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে চার হাজার ৬৮টি ও ৭০টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ছয় হাজার ৩৩৬টিসহ মোট আসনসংখ্যা ১০ হাজার ৪০৪টি, যার তুলনায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছুদের সংখ্যা সাড়ে চার গুণেরও বেশি। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় প্রকৌশলবিদ্যা, কৃষিবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর সরকার-নির্ধারিত ভর্তি ফি ১৮ লাখ টাকা। বেতন ও অন্যান্য নিয়মিত খরচও নির্ধারিত। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে একজন শিক্ষার্থীর কলেজকে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বিদেশি শিক্ষার্থীরা ৩৬ লাখ টাকা এবং এর বাইরে প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত পরীক্ষার ফি ও হোস্টেল খরচ দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই বেশি টাকা আদায় করা হয়।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *