মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বরিশালে আছেন মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

‘মানসিক চাপে আছি’ এ কথাটি সচরাচর ব্যবহার করেন অনেকেই। আর এ মানসিক চাপ থেকেই সৃষ্ট মানসিক সমস্যার কারণে ঘটছে সামাজিক অবক্ষয়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, বরিশাল বিভাগজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য রয়েছে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!

এ অঞ্চলে মানসিক রোগীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতাও। আর আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টির পেছনে মানসিক চাপ অর্থাৎ মানসিক সমস্যাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সূত্র বলছে, এ বিভাগে ময়নাতদন্তের জন্য আসা আত্মহননকারীদের মরদেহের অর্ধেকের বেশির সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, মৃতের মানসিক সমস্যা ছিল। এছাড়াও নানা কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় বিষপান অথবা গলায় ফাঁস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মাসে তারা যত মরদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন এরমধ্যে শুধু আত্মহত্যার ঘটনা রয়েছে ১৯৯টি। এরমধ্যে বরিশাল জেলার ১২৯টি, পটুয়াখালীর ১৯টি, ঝালকাঠীর ১৭টি, পিরোজপুর ও বরগুনার ১৪টি করে এবং ভোলা জেলার ছয়টি মরদেহ। এরমধ্যে ১০ জন শিশু, ১২১ জন নারী রয়েছেন। নারীদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।

এরমধ্যে ২০১৮ সালের ১২ মাসে ৮৯ জন আত্মহত্যা করলেও চলতি বছরের মাত্র নয় মাসেই এ সংখ্যা ১১০। যা গতবছরের তুলনায় বেশি।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯ জনের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, পারিবারিক কলহ, অভিমান কিংবা ঝগড়ার কারণে ১২০ জনেরও বেশি আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। বিয়ে নিয়ে সমস্যা, সামাজিকভাবে হেয় হয়ে বা বিভিন্ন রোগের কারণে আত্মহত্যা করেছেন বাকিরা।

এদিকে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ এ স্লোগানে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়েছে। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা, সন্তানদের সুস্থ ধারায় মানসিক বিকাশ ঘটানোর প্রচেষ্টা থাকতে হবে সবার। পাশাপাশি কারও এ সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় বরিশাল বিভাগে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার জন্য রয়েছেন মাত্র একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি হলেন- সহযোগী অধ্যাপক ডা. তপন কুমার সাহা। ফলে দীর্ঘ এক যুগ ধরে বরিশাল বিভাগে এ রোগের চিকিৎসক সংকটে মানসিক রোগীদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্বজনরা।  

বিষয়ে ডা. তপন কুমার সাহা বলেন, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সচেতনতামূলক কাউন্সিলিং করতে না পারায় একজন মানসিক রোগী দেখে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষও নিজেকে যেকোনো সময় বা যেকোনো মুহূর্তে মানসিক রোগী ভাবতে শুরু করছেন।

বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসকের দাবি, বরিশালে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য সামাজিক, বংশগত ও নৈতিক অবক্ষয় অন্য অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম। সূত্র বাংলানিউজ ২৪।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *