নিরামিষভোজী মানুষের বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনাও কম

আমরা যারা খুব ভোজনরসিক, রসনাবিলাসপ্রিয়, তাদের প্রতিবেলায় পাতে একটু আধটু আমিষ না থাকলে একেবারে যেন চলেই না। আমিষে আমাদের এমনই অভ্যাস যে নিরামিষ আমরা প্রায়ই এড়িয়ে চলি। অথচ এই নিরামিষ যে শরীরকে কতোটা ফিট রাখতে পারে, সেটা আমাদের ধারণাতেও নেই।

প্রাচীন ভারত এবং গ্রীক সভ্যতা থেকে নিরামিষ ভোজন শুরু হয়। নিরামিষ একপ্রকার সুষম খাদ্য। এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ তন্তু, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, সম্পৃক্ত স্নেহপদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ রাসায়নিক পদার্থ। এই কারণে নিরামিষভোজী মানুষের মধ্যে উচ্চ কোলেস্টেরলজনিত কোনো রোগ দেখা যায় না। এমনকি এসব মানুষের ক্ষেত্রে হৃদরোগের সম্ভাবনাও অনেক কম।

নিরামিষ জাতীয় খাদ্য খুব সহজপাচ্য এবং এসব খাদ্য রান্না করাও বিশেষ সুবিধাজনক। এমনকি অর্থনৈতিক সাশ্রয়তাও প্রদান করে। নিরামিষ আহার শুধুমাত্র সুস্থ জীবন যাপনের ক্ষেত্রেই নয় বরং পরিবেশের দিক থেকেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবার জেনে নিই নিরামিষ খেলে কি কি উপকার মেলে-

জীবনকাল হতে পারেন দীর্ঘমেয়াদী

আয়ুষ্কালকে দীর্ঘায়িত করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যার মধ্যে নিয়মিত নিরামিষ খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। আপনার খাদ্যতালিকায় যত বেশি ফল বা সবুজ শাকসবজি থাকবে, আপনার শরীরে তত কম রাসায়নিক ও বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব তৈরি হবে। এটাই আপনাকে বহুকাল যাবত সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করবে।

শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেবে

আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের প্রায় সবটাই তৈরি হয় প্রাণীজ ফ্যাট থেকে, কারণ উদ্ভিজ ফ্যাটে কোনোরকম কোলেস্টেরল থাকে না। যদিও কিছু কোলেস্টেরল মানুষের কোষের জন্য প্রয়োজনীয়, তবুও শুধুমাত্র নিরামিষ খাদ্যের উপর বেঁচে থাকলে শরীরের বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না। উপরন্তু নিরামিষ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

ওজন বাড়ায় ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়

নিরামিষভোজী মানুষগুলো খুব পরিমিত মাত্রায় নিজেদের পছন্দসই খাদ্য খেয়ে থাকেন, তারা কখনোই বেশি পরিমাণে বা আবেগবশত অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন না, এসব কারণে নিরামিষভোজী মানুষের দেহে স্থূলত্ব দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিরামিষ খাদ্য মানুষের ক্ষেত্রে হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসে

আমিষভোজী মানুষেরা প্রায়শই রক্তে শর্করার সমস্যায় ভোগেন, কখনও কখনও খাদ্যগ্রহণের পরে তা উচ্চপর্যায়ে চলে যায়। এসব আমিষাশী মানুষেরা যদি খাবারে নিরামিষ রাখেন তাহলে তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে, এর প্রধান কারণ হলো সুষম নিরামিষ খাদ্য মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি যোগায় তেমনি রক্তে শর্করা ও ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে।

আপনার ত্বক ভালো রাখবে

আপনি যদি সতেজ ও স্বাস্থ্যকর ত্বক চান তাহলে আপনার উচিত সঠিক ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। ফল ও সবুজ তরকারিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস থাকে। তাই এগুলো আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

আমাদের হজমে সহায়তা করে

ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে তন্তু থাকে, এই উদ্ভিজ তন্তু আমাদের পরিপাক ক্রিয়ায় অনেক সহায়তা করে। শরীরের বিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য উদ্ভিজ তন্তু হলো উৎকৃষ্ট উপাদান। এছাড়াও এই সবুজ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা আমাদের দেহে পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। এর ফলে হজমের শক্তি বৃদ্ধি পায়।

মানসিক চাপ কমিয়ে দেয়

গবেষকদের মতে, আমিষাশী মানুষদের তুলনায় নিরামিষাশী মানুষেরা অনেক বেশি সুখী। আমিষাশীদের তুলনায় নিরামিষাশীদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি অনেকটাই বেশি থাকে এবং তারা অনেকটাই সহজ জীবন যাপন করতে সক্ষম। সতেজ সবজি গ্রহণে শরীর ও মনে অনেক বেশি সতেজতা বজায় থাকে। যদি এই সবজি জৈব উপায়ে উৎপাদন করা হয়, তাহলে তা আমাদের শরীরের সতেজতাকে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম।

বিপাকীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি

নিরামিষ খাবার খুব সহজপাচ্য এবং এটা আমাদের বিপাক ক্রিয়াকে সর্বোত্তমভাবে বজায় রাখে। নিরামিষভোজী মানুষের ক্ষেত্রে রেস্টিং মেটাবোলিজম রেটও অনেক বেশি। এই নিরামিষ খাদ্য যে শুধুমাত্র সহজপাচ্য নয়, এটি শারীরিক ফ্যাট বিপাকেও যথেষ্ট সাহায়তা করে।

চোখের ছানি সমস্যা উপশম করে

গবেষণা অনুসারে, খাদ্যাভ্যাস আমাদের চোখের ছানি সমস্যা সৃষ্টির জন্য অনেকটাই দায়ী। দেখা গেছে নিরামিষাশী মানুষদের চোখে ছানি সমস্যার শতকরা পরিমাণ আমিষাশী মানুষদের তুলনায় অনেকটাই কম।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *