শিশুর ব্রংকিওলাইটিস

রবিন ওর বাবার কোলে চড়ে চেম্বারে ঢুকল। ৮ মাস বয়সের রবিন ওর বাবাকে দেখছে, আমার দিকে তাকায়, আর টর্চের আলো দেখে হাসে। ওর মা জানাল ২দিন আগেও ওর নাকে সর্দি ছাড়া কিছ্ ুছিল না। তারপর গত সকাল থেকে কাশি এবং রাত থেকেই বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ করছে এবং সাথে বুক ডেবে যাচ্ছে। শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে। পাশের বাসায় সাদমানেরও ৩/৪ দিন আগে এরকম হয়েছে। ওর মা জিজ্ঞেস করছে? ওর কি মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়েছে? এই

নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে? 
অল্প জ্বর আর শ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া ছাড়া তেমন কোন অসুবিধা পরীক্ষায় ধরা পড়ল না। তারপরও বুকের একটি এক্সরে করে নিশ্চিত করলাম যে, ওর নিউমোনিয়া নয়, ওর হয়েছে শ্বাসকষ্ট রোগ ব্রংকিওলাইটিস। যা নিউমোনিয়ার মত শ্বাসকষ্ট নিয়ে উপস্থিত হলেও নিউমোনিয়ার মত বেশি সংখ্যায় শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী এমন রোগ নয়।

কখন হয় এ রোগ?
শীতে আর বসন্তের শুরুতেই এর প্রকোপ বাড়ে। আর গ্রীষ্মের শুরুতে এবং শরতে একেবারেই কমে যায়। কখনও কখনও এলাকাভিত্তিক বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কি জীবণু এর জন্য দায়ী?
ভাইরাস সংক্রমণে এই রোগ হয়। আরএসভি ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা, এডেনো ইত্যাদি ভাইরাস এর জন্য দায়ী। চোখ বা নাকে সংক্রমিত হওয়ার ২ থেকে ৮ দিনের মধ্যে বাচ্চা ব্রংকিওলাইটিসে আক্রান্ত হয়।

কোন বাচ্চারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ? 
* ৬ মাস বয়সের নীচের বাচ্চারা।
* ছেলে বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হয়।
* অপুষ্ট জন্মগ্রহণকারী বাচ্চাদের বেশি হয়।
* বুকের দুধ না খাওয়া বাচ্চারা।
* যে ঘরে ধোঁয়া, ধূমপান বেশি হয় এবং একসাথে গাদাগাদি করে বেশি মানুষ থাকে।

কি পরীক্ষা করাবেন?
রোগীর ইতিহাস এবং সামনা-সামনি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়। তবে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত বাচ্চাদের বুকের এক্সরে, রক্ত পরীক্ষা এবং অক্সিজেন সেচুরেশন দেখা লাগে।

চিকিৎসা বাসায়ই দেয়া সম্ভব
শতকরা ৯৫ ভাগ রোগীকে বাসায় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। রোগীকে বুকের দুধসহ স্বাভবিক সব খাবার দেয়া যাবে। মাথা উঁচু করে রাখলে শ্বাস কষ্ট কম হবে। নাক বন্ধ থাকলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে পরিষ্কার করবেন। ঠান্ডা লাগাবেন না। কুসুমগরম পানিতে গোসল করাবেন। হালকা জ্বরে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন। সালবুটামল, থিওফাইলিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া তেমন একটা কার্যকরী নয়।

হাসপাতালে ভর্তি হবে কখন?
-মারত্মক সংক্রমিত রোগী, বাচ্চা নেতিয়ে গেলে, উঁচু মাত্রায় জ্বর হলে, খেতে না পারলে, শ্বাসের গতি মিনিটে ৬০/৭০ ছাড়িয়ে গেলে বা ঠোঁট, নাক নীল হয়ে গেলে বাচ্চাকে অবশ্যই হাসপাতালে স্থানান্তর করাতে হবে।
হাসপাতালে ব্রংকোডাইলেটর এরোসল, অক্সিজেন, শিরার স্যালাইন ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
উপদেশ এবং জানার বিষয়
* এটা নিউমোনিয়া নয়। তবে একসাথে অনেক বাচ্চার এ রোগ হতে দেখা দিতে পারে।
* এই অসুখ নিজ থেকেই সেরে যায়। তবে বাচ্চার আরামের দিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। 
* এ রোগে কাশি চলে যেতে ২/৩ সপ্তাহ সময় লাগাতে পারে। রোগটি আবার না হলেও বুকে বাঁশির শব্দ এবং হাঁপানি হওয়ার প্রবণতা কারও কারও থেকে যেতে পারে। 
* নিউমোনিয়ার মত অযথা এন্টিবায়োটিক এবং বারবার বাচ্চাকে এন্টিবায়োটিক দিবেন না।
রোগটি হওয়ার প্রকোপ কমাবেন যেভাবে 
* বাচ্চাকে ধরার আগে-পরে হাত ধুয়ে নিন।
* বাচ্চাকে নিয়মমত বুকের দুধ দিন।
* বাচ্চার আশে-পাশে ধোঁয়া তৈরী করবেন না বা ধূমপান করবেন না।

ডা. জহুরুল হক সাগর
নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ
প্রাইম এইড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *