৪ লাখ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র ৩ ডাক্তার, রোগীরা বিড়ম্বনায়

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানামুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। চার লক্ষাধিক মানুষের জন্য এলাকার একমাত্র সরকারি হাসপাতালে জনসাধারণ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ডাক্তার সংকট। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি সংকটতো আছেই। সব মিলে সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে বারবার আবেদন করা হলেও সংকট সমাধানে কতৃপক্ষ উদ্যোগ নেননি। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কাজ হয়নি। জানা যায়, ৩১ শয্যার এ হাসপাতালটিকে ইতিপূর্বে ৫০ শয্যা ঘোষণা করা হয়েছে। ৫০ শয্যার ভিত্তিতে রোগী ভর্তি এবং ওষুধ পথ্য দেয়া হলেও জনবল কাঠামো রয়েছে ৩১ শয্যার। সেখানেও শুন্যতা আর শুন্যতা।

১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসক/সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে ২১টি, যার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র তিন জন। তারা হলেন- জুনিয়র গাইনি কনসালটেন্ট ডা. নজরুল ইসলাম,ডেন্টাল সার্জন ডাঃ তহমিনা সুলতানা, পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. এ এ এম আবু তাহের, ডেপুটেশনে মেডিকেল অফিসার আছেন আছেন দুজন ডা. আসমাউল ইসলাম তিনি পীরগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মরত ও ডা. আলী আজগর তিনি ভোমরাদহ উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত । লোকবল সংকটের কারণে এরা দুজন পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন।

অ্যানেসথেসিয়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন ডাক্তার দিয়ে গাইনি বিভাগের সিজারিয়ান অপারেশন ইতিপূর্বে চালু রাখা গেলেও অ্যানেসথেসিস্টকে অন্যত্র বদলি করায় প্রায় ২২ মাস ধরে এ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে গর্ভবতী মাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে দৌড়াতে গিয়ে সীমাহীন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। অথচ জুনিয়র গাইনী কনসালটেন্ট পদে একজন সিনিয়র চিকিৎসক কর্মরত থাকলেও অ্যানেসথেসিস্টের অভাবে এ বিভাগের সিজারিয়ান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ফলে দিনের পর দিন অব্যবহৃত থাকায় ওটি’র মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ডেন্টাল বিভাগে চিকিৎসক থাকলেও ডেন্টাল চেয়ারটি ২০০৭ সালে অকেজো ঘোষিত হওয়ায় এ বিভাগের কার্যক্রম ১২ বছর ধরে বন্ধ প্রায়। এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিসিন, সার্জারী, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, অ্যানেসথেসিয়া, ইউনানী ও শিশু বিভাগে কোন চিকিৎক নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্যতম পদ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদটিও শুন্য রয়েছে।

হাসপাতালের স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শুন্য। এ পদের ব্যক্তি সুবিধামতো নিজের এলাকায় ডেপুটেশনে রয়েছেন বছরের পর বছর ধরে। স্টোর কিপারের পদটিও শুন্য দীর্ঘদিন ধরে। স্যানিটেশন এবং স্টোরের দায়িত্ব নিজ কাজের পাশাপাশি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারী বকুল আলম। জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি সেক্টরের দায়িত্ব একা পালন করতে গিয়ে তিনি হাপিয়ে উঠেছেন। এ বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স সাবেরা খাতুন নিজের সুবিধামত ঠাকুরগাঁয়ে ডেপুটেশনে রয়েছেন। ফার্মাস্স্টি এর চারটি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন দুজন।

হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি ২০০৯ সালে অকেজো ঘোষিত হলেও অদ্যাবধি এখানে নতুন মেশিন সরবারাহ করা হয়নি। ফলে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে এক্সরে বিভাগ বন্ধ হয়ে আছে। বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলা শহরে তিনটি ক্লিনিক ও ৯/১০ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং অ্যনেসথেসিস্ট না থাকায় তারাও ঠাকুরগাঁও দিনাজপুর থেকে ডাক্তার নিয়ে আসতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। বাহির থেকে ডাক্তার নিয়ে আসায় তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে, যা জনগনের কাঁধে যাচ্ছে।

হাসপাতালের সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বারবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও সংকট সমাধানে কতৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা।

কমিটির সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আখতারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে গত বছরের জুন মাসের সভায়ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং রেজুলেশনের কপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে, কেন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা তা তার জানা নেই।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতাদানকালে এক দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা জাহিদুর রহমান জাহিদ হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং যত দ্রুত সম্ভব পদগুলো পূরণসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের দাবি জানান। জেলা/উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের সপ্তম গ্রেড পর্যন্ত পদায়ন/বদলি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অধীনে থাকলেও কেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শুন্য পদ ও যন্ত্রপাতিগুলো সরবারাহ করা হচ্ছেনা?

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. এ এ এম আবু তাহের বলেন, ডাক্তার ও অন্যান্য পদের জন্য আমরা বারবার চাহিদা পাঠিয়েও কোনো কাজ হচ্ছেনা। এতে অনেক চিকিৎসা সেবা বেহাত হচ্ছে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *