নামেই হাসপাতাল, আড়ালে বানিজ্যের অভিযোগ

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘হাকীম ডা. মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া হাসপাতাল’ নামে একটি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও এর নেই সরকারি অনুমোদন। হাসপাতালটি ব্যবহার করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার্ন বাণিজ্য।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি টিম গজারিয়ায় হাসপাতালটি পরিদর্শনে গেলে সেখানকার লোকজন তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। মামলার অজুহাত দেখিয়ে কোনো কাগজপত্র দেখাতেও অপারগতা প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) বরাবর একটি চিঠি দেন।

জানতে চাইলে সিভিল সার্জন শেখ মো. ফজলে রাব্বী বুধবার বলেন, সরকারি অনুমোদন থাকলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংরক্ষিত তালিকায় ‘হাকীম ডা. মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া হাসপাতাল’-এর নাম থাকত। সরকারি অনুমোদনের কোনো চিঠি নেই তার দপ্তরে।

তিনি জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটি পরিদর্শনে গেলে হামর্দদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলার অজুহাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বৈধ কাগজপত্র দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই হাসপাতালে রোগীর শয্যা সংখ্যা, চিকিৎসা সেবার ধরন এবং ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ করার উপযুক্ত কি-না, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি অনুমোদন পেতে যেসব সরঞ্জাম ও অবকাঠামো প্রয়োজন হয়, তা সেখানে নেই। সার্জারিসহ অন্যান্য বিভাগে কোনো সরঞ্জামই চোখে পড়েনি।

জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর সরকারি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র সংসদের ভিপি মাঈনুদ্দিন মামুন, শিক্ষার্থী খন্দকার ফারুক আহমেদ, শরিফুল ইসলাম লিমন ও আবু সাঈদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

এতে তারা উল্লেখ করেন, ‘হাকীম ডা. মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া হাসপাতাল’ এর কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ইন্টার্ন সনদপত্র ব্যবহার করে অনেকে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুয়া ইন্টার্ন সনদ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছে। অভিযোগে তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. হাবিবুর রহমান ৪টি বিষয় উল্লেখসহ জরুরিভিত্তিতে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।

এদিকে প্রাপ্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৭ জুলাই হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতিষ্ঠানের প্যাডে মুহাম্মদ ইউনুছ ও কুদরত উল্লাহ নামের দুই ব্যক্তিকে ইন্টারশিপ সনদ দেয়, যা ভুয়া ও জাল বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

এসব বিষয়ে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে সেখানে কর্মরত মেডিকেল অফিসার মোকশেদ আলী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন আছে কি-না তিনি অবগত নন। সূত্রঃ সমকাল।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *