নকল ওষুধে জিম্মিদশা

অসৎ মানুষের কাছে আমাদের সমাজ দিন দিন জিম্মি হয়ে পড়ছে। সবাই টাকার মালিক হতে চায়। রাতারাতি কম পরিশ্রমে কোটিপতি হতে চায়। রাতারাতি কম পরিশ্রমে টাকা কামানোর জন্য বেছে নেয় অবৈধ পন্থা। একজন দু’জন করে যখন সমাজের বৃহৎ অংশ কোন না কোনভাবে অসৎ পথে টাকার মালিক হতে শুরু করে তখন সমাজ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে। অসৎ মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাষ্ট্রীয় নজরদারি বাড়াতে না পারলে অসৎদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ডানে তাকালে বামে অনাচার শুরু হয়। বাম সামলাতে গেলে আবারও ডানে অনিয়ম দেখা দেয়। আমাদের ওষুধ শিল্প পড়েছে তেমনি এক সঙ্কটের মুখে। ওষুধ শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে সুখ্যাতি পেয়েছে। কিন্তু দেশীয় বাজারে অনেকটা এলোমেলো। দেশজুড়ে নকল ওষুধের ছড়াছড়ি।

রোগ ভাল হবে কি হবে না তা নির্ভর করে ওষুধের ওপর। নকল ওষুধের খপ্পরে পড়ে রোগ তো ভাল হচ্ছেই না বরং নতুন জটিলতায় মৃত্যুকে বরণ করতে হচ্ছে। নকল ওষুধ ঠেকাতে না পারলে ভবিষ্যত চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়বে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সরকারের আধুনিকায়ন ব্যর্থ হয়ে যাবে। নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় আমরা কর্মক্ষমতা হারাব।

নকল ওষুধ মোকাবেলায় তাই কঠোরতার বিকল্প নেই। বিচ্ছিন্ন নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি লাগাতার অভিযান চালাতে হবে। আমাদের দেশে ঝটিকা অভিযান হয়। হঠাৎ বিপুল পরিমাণে জেল-জরিমানা করা হয়। নকল ওষুধের সয়লাব দেখে সবাই হতবাক হয়। কিন্তু অভিযানের ধারাবাহিকতা থাকে না। তাই নকল ওষুধ এক অঞ্চলে সরবরাহ সাময়িক বন্ধ থাকলেও পাশের অঞ্চলে চলতে থাকে। পাশের অঞ্চলে নজর পড়তে পড়তে আবারও জেল-জরিমানা কাটিয়ে অবৈধ ব্যবসা শুরু হয়ে যায়।

দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে শক্তিশালী করতে হবে। তাদের কাজের পরিধি বাড়ানো এবং কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধ শিল্প সমিতিগুলো ও ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নকল ওষুধ বন্ধের অভিযানে সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের নকল ওষুধের বিরুদ্ধে কর্মসূচীতে মাঠে নামাতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান দায় নিতে না চাইলে শাস্তির ব্যবস্থাও রাখা যেতে পারে।

একদম চোরাই কারখানায় যেমন নকল ওষুধ প্রস্তুত হয় তেমন লাইসেন্স পাওয়া ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানও নকল ওষুধ তৈরি করে। ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান প্রথমে নিয়মকানুন মেনে লাইসেন্স নেয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর তাদের চেহারা বদলে যায়। নিজেরাই প্রস্তুত করে নকল ওষুধ। যে ওষুধ প্রস্তুত করার অনুমতি নেই তাও প্রস্তুত করে। ‘টোল ম্যানুফ্যাকচারিং’য়ের নামে অনুমতি পাওয়া কোম্পানি থেকে সেই ওষুধের সামান্য অংশ বানিয়ে নিলেও গোপনে নিজেরাই তৈরি করছে সিংহভাগ।

নকল ওষুধের ব্যবসায় আগ্রহের অন্যতম কারণ হচ্ছে ওষুধের দাম। অভিযোগ আছে কোম্পানিগুলো উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণ করে। ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণেও ভেজাল ও নকল ওষুধ বানানোর ঝুঁকি নেয় অসাধুরা। ধরা পড়ার আগে আগে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়ে যায়। টাকা এনে দেয় প্রভাব-প্রতিপত্তি। এতে তার পাশের লোকজনও অসাধু উপায় অবলম্বনে সাহস পায়। এভাবে ব্যবসা বাড়তে থাকে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাতে হবে। আইনের আওতায় আসার পর কোন আইনজীবী বা সমাজের সংশ্লিষ্ট শ্রেণী পেশার মানুষ অপরাধীর সাহায্যে যেন এগিয়ে না আসে সেজন্য সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সূত্রঃ জনকণ্ঠ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *