ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে ডিএসসিসি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে ২০১৯ সালে বিশ্বের ১২৬টি দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটেছে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম-বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে এ বছর ঢাকাসহ পুরো দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকারে দেখা দেয়, যা কমতে শুরু করেছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর সফরের যান।

গত ১০-১১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এজেন্সিতে (এনইএ) অনুষ্ঠিত সেশনে ভেক্টর কন্ট্রোল রেগুলেশন, ডেঙ্গু কেস ম্যানেজমেন্ট, ডেঙ্গু কন্ট্রোল সার্ভিলেন্স, আউটব্রেক ম্যানেজমেন্ট, সার্ভিলেন্স, রিক্স অ্যাসেসমেন্ট এবং কীটনাশকের ওপর সেমিনারে অংশ নেন তারা।

এসব সেমিনারে সিঙ্গাপুরের ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর আলোচনা হয়। এখন সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে চায় ডিএসসিসি।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ বলেন, সিঙ্গাপুরে এনভায়রমেন্ট ও ওয়াটার রিসোর্স মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল এনভায়রমেন্ট এজেন্সি মূলত মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে তাদের মুখ্য কাজগুলো হলো- জনসচেতনতা সৃষ্টি, নিয়মিত অ্যান্টোমোলজি ও ইপিওডোমিওলজিক্যাল সার্ভিলেন্স।

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে মাঠপর্যায়ের ডাটা সংগ্রহ করে জিআইএস ম্যাপিং করা হয়। যদি ১৫০ মিটার জায়গায় দুই সপ্তাহের মধ্যে ২ থেকে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়, তাহলে সেটা হলুদ বিপদ সংকেত। যদি ১৫০ মিটারের মধ্যে দুই সপ্তাহে ১০ বা তার বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়, তাহলে সেটা লাল বিপদ সংকেত। এই সংকেত অনুযায়ী তারা করণীয় নির্ধারণ করে। তারা বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করে, লার্ভার সোর্স ধ্বংস করে, মানুষকে সজাক করে এবং স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে লাগায়। জনসম্পৃক্ততা বাড়ায় এবং টাস্কফোর্স মাঠে নামে।

তিনি জানান, তাদের গবেষণা অত্যন্ত উন্নত মানের। এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট এ গবেষণার কাজ করে থাকে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা ডাটা ও নমুনা সংগ্রহ করে ওখানে পাঠায়। ওখানে বিভিন্ন প্রজাতির মশা চাষ হয়, গবেষণা হয় এবং ভাইরাসের প্রকার শনাক্ত করা হয় জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য। তারা বিভিন্ন প্রকার লিফলেট, মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে।

কীভাবে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন- জানতে চাইলে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এনভায়রমেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউট সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বশেষ তথ্য বিনিময় প্রযুক্তি ব্যবহার, কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে। এই অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহে তাদের এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হবে এবং তারা এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।’

‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এ ব্যাপারে পজিটিভ মনোভাব পোষণ করেছে। এভাবে ডেঙ্গু মোবাবেলায় সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের জন্য কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’

তবে এবার তো সিঙ্গাপুরেও ডেঙ্গুর বেশ প্রকোপ দেখা দিয়েছে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বেশি মশার জন্ম, বেশি তাপমাত্রা, বাসা-বাড়িতে বেশি লার্ভা, মানুষের কম প্রতিরোধক ক্ষমতার কারণে এটি হয়েছে। তাদের লার্ভার মুখ্য জায়গা হলো- ফুলের টপ, কৃত্রিম কন্টেইনার, ছাদ বাগান, নির্মাণাধীন বিল্ডিং এবং বাসের হোল।

সম্প্রতি এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের বিদ্যমান জনবল কাঠামোকে সংশোধন করার মধ্য দিয়ে কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট নামে একটা ডিপার্টমেন্ট তৈরি করতে চাই। যে ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে আমাদের গৃহীত প্রকল্প এবং আমাদের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি। সিঙ্গাপুর সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে সে দেশের মিনিস্ট্রি অব এনভায়রনমেন্ট, মিনিস্ট্রি অব হেলথ এবং হেলথ ইন্সটিটিউটের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমরা সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছি।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *