কম ঘুমের নানা প্রভাব

কাজকে খুব ভালোবাসেন বলেই রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস। কর্মক্ষেত্রেও দক্ষ কর্মী হিসেবে আপনার খুব সুনাম। তাই শুনে খুশিতে আপনিও বাকবাকুম। এবার তবে এর উল্টো দিকটা দেখুন। কম ঘুমিয়ে নিজের কী ক্ষতি ডেকে আনছেন তা আপনি নিজেও জানেন না। প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম দরকার। কখনো কখনো তা আরও কিছু কম হতে পারে, তাতে বিশেষ ক্ষতি নেই। তবে নিয়মিত যদি ছয় ঘণ্টারও কম ঘুম হয় তবে তা আপনার জন্য ভালো কিছু বহন করছে না।

ঘুম কম হচ্ছে তবে শরীর সুস্থই আছে। এদিকে কাজের সময় কাজে মন দিতে পারছেন না। নানারকম ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। কোনোকিছু করার ইচ্ছাশক্তি যেন হারিয়ে যাচ্ছে। শারীরিকভাবে আপনাকে দেখতে সুস্থ লাগলেও আপনি আসলে সুস্থ নন। বিশেষজ্ঞরা বলেন কম ঘুম সবচেয়ে আগে প্রভাব ফেলে মনে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে কম ঘুমের ফলে ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করতে পারেন যেকোনো মানুষ।

বয়সের তুলনায় দেখতে বয়স্ক লাগছে আজকাল? এটি কিন্তু আপনার কম ঘুমের প্রভাব। ঘুম ঠিকমতো না হলে কর্টিসল নামের হরমোনের ক্ষরণ যায় বেড়ে। এটি নষ্ট করে দেয় ত্বকের কোলাজেনকে। এদিকে কোলাজেনের কাজ হল ত্বকের টানটান বাঁধন ধরে রাখা। তাই কোলাজেন গেল তো ত্বকের যৌবনও গেল। শুধু তাই নয়, চোখের নীচে কালি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডার্ক সার্কেলের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের মূল রহস্য সুখী যৌন জীবনের লুকিয়ে থাকে। কিন্তু তাতে বাঁধা এলে মন-মেজাজ বিগড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কম ঘুমের ফলে শরীরে সেক্স হরমোনের ক্ষরণ কমতে থাকে। শুধু তাই নয়, কমে যায় উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হরমোন। এটি কমিয়ে দেয় সেক্স করার ইচ্ছাও।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কম ঘুম বাড়িয়ে দেয় হৃদরোগের সম্ভাবনা। কম ঘুম হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে ব্যাঘাত ঘটায়। দীর্ঘদিন কম সময় ঘুমোলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তো থাকেই বরং হার্ট ফেইলিওরও হতে পারে। এছাড়াও ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস এর মতো বিপজ্জনক রোগগুলোও আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে।

ঘুম কম হলে আপনার ওজনও বাড়তে পারে! বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মোটা হওয়ার জন্য দায়ী পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। পর্যাপ্ত না ঘুমালে ক্ষুধা বেশি পায়, এমনটাও দেখা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়। বেশি খাচ্ছেন অথচ কম ঘুমের জন্য বিএমআর রেট সঠিক নয়। ফলে শরীরে জমছে অতিরিক্ত ফ্যাট যা আপনার ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ঘুম পর্যাপ্ত না হলে মস্তিষ্কের স্মৃতির অংশটি দুর্বল হতে থাকে যা ভুলিয়ে দিতে থাকে আপনার অতি প্রয়োজনীয় ঘটনা বা কথাগুলোও। দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ায় কম ঘুমের ফলে মস্তিষ্ক ঠিকঠাক নির্দেশ দেয়া-নেয়া করতে পারে না। ফলে যা করতে চান, তা না হয়ে অন্য একটা ভুল কাজ হয়ে যায়। এই সমস্যা অত্যন্ত বিপদের। কম ঘুমিয়ে হয়তো অনেক কাজ সেরে ফেলা যায়। কিন্তু তাতে শরীরের প্রতি অন্যায় করা হয়। তাই শরীর ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *