কৃত্রিম হাঁটু ও নিতম্ব প্রতিস্থাপন, নতুন আশার সঞ্চার

কোনো রোগীকে অস্ত্রোপচারকক্ষে ঢোকানো হলে ঘনিষ্ঠজনেরা বাইরে পায়চারি করবেন, এটাই নিয়ম। এই সময়টা কী উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কাটে, একমাত্র ভুক্তভোগীরাই তা জানেন। কিন্তু ব্যাপারটা যদি এমন হয়, শল্যচিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি দেখা যাচ্ছে, এমনকি শরীরে নির্দিষ্ট প্রত্যঙ্গে কাটা-ছেঁড়া-সেলাই করতে করতে কথা বলছেন স্বয়ং সার্জন। কেন কীভাবে এসব করছেন তিনি, এ নিয়ে বিভিন্নজনের প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটিই ঘটেছে সম্প্রতি কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনিগেলস হাসপাতালে।

গত ২ থেকে ৪ আগস্ট হাঁটু ও নিতম্ব প্রতিস্থাপনের ওপর একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল অ্যাপোলো। ভারতের বিভিন্ন শহরের তো বটেই, বাংলাদেশ, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশের অন্তত ২০০ তরুণ চিকিৎসক অংশ নিয়েছিলেন এই কর্মশালায়। এতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে ভারতের ৫০ জন এবং সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশের ১০ জন অভিজ্ঞ ও স্বনামখ্যাত শল্যচিকিৎসক (সার্জন) উপস্থিত ছিলেন।

তরুণ চিকিৎসকদের তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তবের অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন জানালেন উদ্যোক্তারা। তিন দিনের কর্মশালায় হাঁটু ও নিতম্ব প্রতিস্থাপনের ১০টি শল্যচিকিৎসা দেখানো হলো। মানবদেহের হাঁটু ও নিতম্বে কৃত্রিম যন্ত্র সংযোজন করে প্রায় বিকলাঙ্গ হয়ে পড়া একজন রোগীকে কীভাবে সচল ও নতুন জীবনের আলো দেখাচ্ছেন এই চিকিৎসকেরা, শল্যচিকিৎসার বিভিন্ন পর্ব হাতে-কলমে করছেন সার্জনরা, একটি বড় মিলনায়তনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে সেই দৃশ্য সরাসরি দেখানো হচ্ছে। শল্যচিকিৎসার বিভিন্ন পর্যায় এভাবে পর্যবেক্ষণ করা তরুণ অর্থোপেডিক চিকিৎসকদের জন্য এক বড় সুযোগ। শুধু তা–ই নয়, অপারেশন চলাকালেই এই তরুণ চিকিৎসকেরা কোনো বিষয়ে কৌতূহলী হলে তা জানতে চাইছেন সরাসরি যিনি অস্ত্রোপচার করছেন তাঁর কাছে। সার্জন অস্ত্রোপচারকক্ষ থেকে কর্মরত অবস্থায়ই সেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।

অ্যাপোলো গ্লেনিগেলসের এই অর্থোপ্লাস্টি কর্মশালার পরিচালক বুদ্ধদেব চ্যাটার্জি বললেন, ‘আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে। অর্থাৎ মানুষ বেশি বছর ধরে বাঁচছে। ফলে হাঁটু ও নিতম্বের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘ বা প্রলম্বিত জীবনের বাড়তি বোঝা বহন করে হাঁটু ও নিতম্ব ক্ষয়প্রাপ্ত বা অকেজো হয়ে পড়ে। সাধারণ চিকিৎসায় কাজ না হলে হাঁটু বা নিতম্বে কৃত্রিম যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই উন্নত প্রযুক্তির প্রতি মানুষ এখন উৎসাহী হয়ে উঠছে বলে তিনি জানান।

ডা. চ্যাটার্জি বলেন, ‘এখনো হাঁটু বা নিতম্ব প্রতিস্থাপনের কাজ হয় অল্প কিছু হাসপাতালে। আমরা চাই এই চিকিৎসাসুবিধা ভারত ও আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ুক।’ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সার্জন গড়ে তোলার জন্যই তাঁদের এই উদ্যোগ।

তিন দিনের অর্থোপ্লাস্টি কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের চিকিৎসক খালেদ বিন ইসলাম। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অল্প সময়ে এ ধরনের শল্যচিকিৎসা সরাসরি দেখা ও বোঝার যে সুযোগ পেয়েছি, তা এককথায় অসাধারণ। আশা করছি প্রশিক্ষণের জ্ঞান আমাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।’

অ্যাপোলো গ্লেনিগেলস হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিন দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার পাশাপাশি হাঁটু ও নিতম্ব প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে তরুণ চিকিৎসকদের জন্য ছয় মাসের একটি ফেলোশিপ কোর্স চালু করেছেন তাঁরা।

হাড়ের ক্ষয়জনিত কারণে যাঁরা নিজের পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারছেন না, নিতম্বের অসহ্য যন্ত্রণায় সোজা হয়ে বসতে পারাটাও যাঁদের কাছে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠেছে—এ ধরনের উদ্যোগ তাঁদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে, সন্দেহ নেই। সূত্রঃ প্রথমআলো

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *