খাবারের সঙ্গে ক্যানসারের যোগসূত্র

১৯৬০ সাল থেকেই বিজ্ঞানীরা খাদ্যদ্রব্য, পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য, খাবারের রং ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে খাদ্যের অভ্যাস ও ক্যানসার—এই দুইয়ের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কী রকম খাবার বেশি খেলে কী ধরনের ক্যানসার বেশি হয় আবার কোন খাবার না খেলে বা কম খেলে কোন ক্যানসার কম হয়, বিজ্ঞানীদের কাছে তা দিন দিন পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা এখন জোরগলায় বলছেন, সঠিক খাবারদাবার স্তন, অন্ত্র এবং অগ্ন্যাশয় ও যকৃতের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

ইপিডেমিওলজি–বিষয়ক কিছু জরিপে দেখা যায়, স্তন ক্যানসারের সঙ্গে খাবারের প্রাণিজ মাংস, চর্বি ও  স্থূলতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রাণিজ চর্বি, রক্তের এস্ট্রিডিয়ল হরমোনের উচ্চমাত্রা তৈরিতে সহায়তা করে, যা পরবর্তী সময়ে কারসিনোজেন হিসেবে কাজ করে এবং স্তন ক্যানসার সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বেশি মাত্রায় অ্যালকোহল বা মদ গ্রহণ করলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। খাদ্যে ভিটামিন এ এবং ই–এর অভাব ও কম আঁশযুক্ত খাবারের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।

খাবারের মধ্যে ফলমূল, শাকসবজি, গমের আটা, উদ্ভিজ্জ তেল ও তেলজাত পদার্থ যেমন সয়াবিন, পাম তেল, নারকেল ইত্যাদি অন্যতম। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ফলমূল, শাকসবজি ও আটায় যে আঁশ ও পুষ্টি উপাদান আছে, সেগুলোই স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কিছু খাবারের কারণে যেমন ক্যানসার হতে পারে, তেমনি কিছু খাবার ক্যানসার প্রতিরোধ করে আপনাকে রক্ষা করবে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ ক্যানসার মূলত খাবারের কারণেই হয়ে থাকে। স্থূলকায় পুরুষ ও নারীদের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে পুষ্টিহীনতাও ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আপনি যদি একটু সচেতন হন এবং খাদ্যাভ্যাসে নিয়মকানুন মেনে চলেন, তবে ক্যানসারসহ বহু রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

ক্যানসারমুক্ত থাকার সহজ উপায়
স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চা। রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য, অ্যালকোহল বা মদ, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ আর্সেনিকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, রেডিয়েশন বা বিকিরণ, ঝুঁকিপূর্ণ মেলামেশা বর্জন করতে হবে। এর বিপরীত স্বাস্থ্যকর খাবার তথা প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস, কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম, পরিচ্ছন্নতা, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং হেপাটাইটিস বি ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে সবাইকে।

এ ছাড়া শুরুতে ক্যানসার নির্ণয় করে সেটি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে। ক্যানসারের চিকিৎসা সময়মতো করানো এবং প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করা ক্যানসার প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে।

অধ্যাপক কাজী মনজুর কাদের

বিভাগীয় প্রধান অনকোলজি, ডেলটা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।  সূত্রঃ প্রথমআলো

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *