স্বাস্থ্যকর ৯টি শাকসবজি

প্রত্যেক চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের কাছে ডায়েট সংক্রান্ত প্রশ্ন রাখলে তারা সবাই সম্ভবত এ কথাটি অবশ্যই বলবেন: আপনার ডায়েটে অবশ্যই শাকসবজি রাখবেন। শাকসবজি যে পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস এটা এখন আর বেশিরভাগ মানুষের অজানা নেই। কিন্তু তারপরও অনেকের ধারণা হলো, পুষ্টিকর খাবার মানেই মাছ-মাংস কিংবা অন্যান্য দামি খাবার।

হ্যাঁ মাছ, মাংস ও অন্যান্য দামি খাবারেও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে, কিন্তু আপনি কেবলমাত্র এসব খাবার খেয়ে সুস্থ থাকতে পারবেন না, আপনার ডায়েটে পুষ্টিকর শাকসবজিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে তথা জীবনের আয়ু বাড়াতে আপনার ডায়েটে খাবারের উদ্ভিজ্জ উৎস ও প্রাণীজ উৎসের সমন্বয়সাধন করতে হবে। একারণে কোন খাবারে কোন পুষ্টি কি পরিমাণে রয়েছে তা সম্পর্কে জানা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ৯ শাকসবজি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

* বাঁধাকপি

সকল পাতাযুক্ত শাকসবজির মধ্যে অন্যতম সর্বাধিক স্বাস্থ্যকর হলো বাঁধাকপি। এক কাপ রান্না করা বাঁধাকপিতে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এ সবজি আপনার মেজাজ বা মানসিক অবস্থা উন্নত করতে পারে। টাফটস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা পেয়েছেন, যেসব লোক প্রতিদিন দেড় বাটি সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি (বাঁধাকপিও অন্তর্ভুক্ত ছিল) খেয়েছিল তাদের মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন (যুক্তি, স্মৃতি, মনোযোগ ও জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যক্রম) তাদের তুলনায় দীর্ঘসময় ভালো ছিল যারা সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি তেমন একটা খাননি।

* ব্রোকলি

ব্রোকলি হলো ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যালসের সমৃদ্ধ উৎস। এ সবজিটি আপনাকে ব্লাডার বা মূত্রাশয়ের ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে পারে।

* লাল ক্যাপসিকাম

একটি মাঝারি সাইজের লাল ক্যাপসিকামে মাত্র ৩২ ক্যালরি থাকে, কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা আপনাকে দৈনিক সুপারিশকৃত ভিটামিন সি এর ১৫০ শতাংশ সরবরাহ করতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যাথেরোস্ক্লেওরোসিস (ধমনীর প্রাচীরে প্লেক জমে ধমনী সরু ও শক্ত হয়ে যাওয়া) থেকে সুরক্ষা দিতে পারে- অ্যাথেরোস্ক্লেওরোসিস হার্টের রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

* পালংশাক

অন্যান্য পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজির মতো পালংশাকেও প্রচুর ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের সুস্থতা বৃদ্ধি করে ও ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করে- বয়স্ক লোকদের অন্ধত্বের প্রধান কারণ হলো ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। এ সবুজ শাক রান্না করে খেলে আপনার শরীরে লুটেইন আরে ভালোভাবে শোষিত হবে।

* ব্রাসেলস স্প্রাউটস

এ সবুজ সবজির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ক্যানসার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‍্যাডিকেলস দূর করতে পারে এবং অর্ধ বাটি রান্নাকৃত স্প্রাউটসে দৈনিক সুপারিশকৃত ভিটামিন সি এর ৮০ শতাংশ পাওয়া যায়। এ সবজিটি হার্টের রোগ ও চোখের ছানি প্রতিরোধে অবদান রাখে। আপনি ব্রাসেলস স্প্রাউটসকে অলিভ অয়েলে সাউটি করে খেতে পারেন- রান্নার এ পদ্ধতিতে ভিটামিন সি তেমন ধ্বংস হবে না।

* বিট

আপনি বিটকে রোস্ট করে কিংবা পিকেল করে যেভাবেই খান না কেন, এ সবজি থেকে প্রচুর স্বাস্থ্যকর পুষ্টি পাবেন। এ সবজির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার ও প্রদাহের বিরুদ্ধে ফাইট করে। এ সবজির পাতাও ফেলে দেয়ার মতো নয়- এ সবজিতে সবচেয়ে বেশি পুষ্টি থাকে এর সবুজ অংশ বা পাতায়। পালংশাক, সরিষা শাক, পাতাকপি ও অন্যান্য পুষ্টিকর শাকের মতো বিটের পাতা ও ডাটাকেও রান্না করে খাওয়া যায়।

* পেঁয়াজ

পেঁয়াজকে কাঁচা খেলে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। অন্যদিকে পেঁয়াজকে উচ্চ তাপে রান্না করলে ফাইটোকেমিক্যালসের উপকারিতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়ে থাকে। এসব ফাইটোকেমিক্যালস মানুষকে ফুসফুস ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঁচা পেঁয়াজ, টমেটো, অ্যাভোকাডো ও খাটো, মোটা ঝাল মরিচ কুচিকুচি করে কেটে একসঙ্গে যোগ করে খেতে পারেন অথবা, হাতের কাছে সব উপকরণ না থাকলে আপনার পছন্দমতো সালাদের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন।

* ভুট্টা

কেবলমাত্র ভুট্টার দানা নয়, এটির মোচাও স্বাস্থ্যকর। ২০১৮ সালের একটি রিভিউ গবেষণা থেকে জানা যায়, হাই নিউট্রিয়েন্ট প্রফাইল বা উচ্চ পুষ্টিগুণের (ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ডায়েটারি ফাইবার ও আরো কিছু পুষ্টি) কারণে নিয়মিত ভুট্টা খেলে ক্রনিক রোগ ডেভেলপের ঝুঁকি কমে যায়, যেমন- হার্টের রোগ, রক্তনালির রোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতা। এ শস্য পরিপাক স্বাস্থ্যও উন্নত করে।

তথ্যসূত্র : দ্য হেলদি

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *