বিএমএবাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে ঘরে বসেই কেনা যাবে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও ডিভাইস

অনলাইনে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ও ডিভাইস বিক্রির ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম বিএমএবাজারডটকম(https://bmabazar.com/)। “প্রফেশনাল মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এট ইয়োর ডোর স্টেপ” এই স্লোগানকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য পণ্য ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করতে কাজ করে চলেছেন ৩জন উদ্যোক্তা। সম্প্রতি  হেলথ জার্নালের সাথে কথা বলেছেন ভিন্ন ধর্মী এই প্ল্যাটফর্মের সি ই ও আলী ইমরান দাইয়ান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাসেল দেওয়ান।  

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের অনলাইনে মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির ধারণা কীভাবে আসলো?

আলী ইমরান দাইয়ানঃ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে আমাদের চিন্তা ছিল ভিন্নকিছু করার যা হবে সবার থেকে আলাদা। তো আমরা চিন্তা করলাম যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী কী সমস্যা আছে। এইভাবে বেশ কিছু  আইডিয়া চলে আসলো। দুই বছর আগে আমরা চিন্তা করলাম যে আমরা একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির গ্রাহকদের জন্য যারা দেশের স্বাস্থ্য  সেবার সাথে সরাসরি জড়িত। এর পেছনে আমার একটি ঘটনা আছে। আমি একবার একটি গ্লুকোমিটার কিনতে দোকানে যাই। গ্লুকোমিটারের গায়ে সবোর্চ্চ খুচরা মূল্য লেখা ছিল ২০০০ টাকা। আমাকে সেটি দোকানদার ১৫৫০ টাকায় বিক্রি করল এই বলে যে আমাকে সে পণ্যটি কমে দিচ্ছেন। তখন আমার মাথায় চিন্তা আসলো যে ওরা এখানে কত টাকা লাভ করলো। আসলেই কী এটার দাম এত? আমরা ডিসপেনসারিতে যে প্রোডাক্ট গুলি দেখি সেগুলোর দাম অনেক বেশি। কারণ সেখানে দোকান ভাড়া আছে, সেলস ম্যানের খরচ আছে, দোকানদারের লাভ আছে অর্থাৎ সাপ্লাই চেইনটা যতবড় হবে সেই সাথে প্রোডাক্টের মূল্যও বেড়ে যাবে। তো এখন ঐ একই গ্লুকোমিটারটা আমরা ৬০০-৭০০ টাকায় আমাদের ওয়েবসাইটে বিক্রি করছি। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের জন্য খরচটা অনেক কমে যাচ্ছে। গ্রাহকদের কীভাবে আরো সুবিধা দেওয়া যায় এই চিন্তা থেকেই এই ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু।



ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান এবং সি ই ও আলী ইমরান দাইয়ান

হেলথ জার্নালঃ আপনারা কি ধরনের মেডিকেল প্রোডাক্ট বিক্রি করেন?

মেহেদী হাসানঃ আমরা মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, ডিভাইসেস, ডিসপোজেবলস, ল্যাবরেটরি ইকুইপমেন্ট, সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও এক্সেসরিস, ডেন্টাল ও ইমারজেন্সি ইকুইপমেন্ট সহ প্রায় সকল ধরণের প্রোফেসনাল এবং হোম হেলথকেয়ার মেডিকেল প্রোডাক্ট বিক্রি করি।

হেলথ জার্নালঃ আপনারা কীভাবে পণ্য সংগ্রহ করেন?

মেহেদী হাসানঃ আমাদের ভেন্ডররা মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও ডিভাইস গুলি আমদানি করেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকদের সরবরাহ করেন। এখানে ওয়েবসাইটে ভেন্ডরদের ভেন্ডর প্রোফাইল একাউন্ট খুলতে হয়। এরপর প্রতিটা পন্যের নাম, মডেল, ব্র্যান্ড, বৈশিষ্ট্য, ফিচার, দাম এগুলো দিতে হয়। ভেন্ডর চাইলে যেকোনো সময় পণ্য আপলোড,আপডেট, ডিলিট করতে পারবে। কিন্তু কোন কিছু আপডেট করলেই সেটা সাথে সাথে পাবলিশ হবেনা। আমরা এডমিন প্যানেল থেকে সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখি যে পন্যের যে দাম  এবং অন্যান্য পরিবর্তন হয়েছে সেটা বাকি ভেন্ডরদের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ কিনা। আমরা গ্রাহকদের সুবিধার্থে এইসকল বিষয়গুলি মনিটর করি।

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের ভেন্ডররা কোন কোন দেশের পন্য আমদানি করেন?

মেহেদী হাসানঃ আমাদের ভেন্ডররা মূলত যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, জাপান, চীনসহ আরো কিছু দেশ থেকে পন্য আমদানি করেন।

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের পণ্যগুলো কতটা মানসম্পন্ন?

আলী ইমরান দাইয়ানঃ আমাদের ওয়েবসাইটে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ মানের ও ব্রান্ডের (যেমনঃ ফিলিপ্স, মাইন্ডরে, এবোট ইত্যাদি) মেডিকেল ইকুইপমেন্ট ক্রয় করার সুবিধা পাচ্ছেন। ব্রান্ড গুলো কেউ কেউ ১ থেকে ২ বছরের ওয়ারেন্টিও দিয়ে থাকে। এছাড়াও আমরা নিম্নমানসম্পন্ন মেডিকেল ডিভাইস বা এক্সেসরিজ আমাদের সাইটে ডিস্প্লে করি না যাতে ভোক্তাগণ প্রতারিত না হন।

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের ব্যবসার পরিধি কতটুকু?

মেহেদী হাসানঃ আমরা ঢাকাসহ সারাদেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে থাকি।

হেলথ জার্নালঃ কীভাবে পন্যগুলি সরবরাহ করেন?

মেহেদী হাসানঃ আমরা দুইভাবে পণ্য গুলি গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করি। প্রথমত মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহকদের সরাসরি ভেন্ডরের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই। এরপর ভেন্ডর গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করেন। দ্বিতীয়ত মেডিকেল ডিভাইস ও এক্সেসরিজ এর ক্ষেত্রে আমরা সরাসরি অর্ডার নেই এবং কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করি।

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের পেমেন্ট নেওয়ার সিস্টেম কিরকম?

মেহেদী হাসানঃ আমরা ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ক্যাশ অন ডেলিভারিসহ সম্ভাব্য সব উপায়ে পেমেন্ট নিয়ে থাকি। এছাড়াও বিশেষ ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও পেমেন্ট নিয়ে থাকি।

হেলথ জার্নালঃ গ্রাহকদের কাছ থেকে কী রকম সাড়া পাচ্ছেন?

মেহেদী হাসানঃ আলহামদুলিল্লাহ আমরা প্রত্যাশার চাইতেও ভালো পরিমাণে সাড়া পাচ্ছি।

হেলথ জার্নালঃ একজন গ্রাহক কেন আপনাদের কাছ থেকে পন্য কিনবে?

আলী ইমরান দাইয়ানঃ ধরুন একজন ক্রেতা একটি ডিভাইস কিনবে। সেজন্য তাকে আগে খোঁজ নিতে হবে ঐ ডিভাইস কোথায় পাওয়া যায়, খরচ কত, এরপর তাকে স্বশরীরে মার্কেটে যেতে হবে, দরদাম করতে হবে, শেষে হয়ত বেশি দাম দিয়ে ঐ ডিভাইসটি কিনতে হবে, তারপরও একটা প্রশ্ন থেকে যায় যে ডিভাইসটির গুনগতমান ঠিক কিনা। কিন্তু ক্রেতা যখন আমাদের ওয়েবসাইটে আসছেন সেক্ষেত্রে স্বশরীরে কোথাও যেতে হচ্ছেনা। ওয়েবসাইটে কাঙ্ক্ষিত ডিভাইসটি সার্চ করে একই ধরনের অনেকগুলো ডিভাইসের ফিচার ও মূল্য দেখে একটার সাথে আরেকটার তুলনা করে তার জন্য সঠিক ডিভাইসটি পছন্দ করতে পারছেন। এবং একইসাথে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে, অল্প পরিশ্রমে ঘরে বসেই ডিভাইসটি পেতে পারেন। ফলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে।

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের বিক্রয়ত্তোর সেবা কীরকম?

মেহেদী হাসানঃ কোন পন্যের ওয়ারেন্টি থাকা কালে যদি কোন সমস্যা হয় সেই ক্ষেত্রে আমরা নিয়মঅনুযায়ী ঐ সমস্যার সমাধান করে দেব।

হেলথ জার্নালঃ অনলাইনে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন?

আলী ইমরান দাইয়ানঃ ক্রেতাকে এখানে নিয়ে আসা একটা চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। ক্রেতাদের অভ্যাস বদলানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের যারা টার্গেট কাস্টমার তারা সরাসরি দোকানে গিয়ে বাঁ রিটেইলারদের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনে অভ্যস্ত। আর এখানে অনেক রিসার্চ এর ব্যাপার আছে, ক্রেতা কী চায়, বাজারে কিসের চাহিদা এইসকল বিষয়ে কাজ করতে হয়। ক্রেতাদের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনাটা একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আবার যারা এখানে পণ্য বিক্রি করেন তাদেরকেও আমাদের অনলাইন মার্কেট এর সুবিধা সম্পর্কে অবগত করতে হয়। এছাড়াও ভেন্ডর এবং ক্রেতা সবারই অনলাইন মার্কেট সম্পর্কে আস্থা কম। আমরা আশাকরি এগুলো ভবিষ্যতে কাটিয়ে উঠতে পারবো।

হেলথ জার্নালঃ অভিযোগ রয়েছে আমদানিকৃত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বাজারে ন্যায্যমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আপনারা কি ন্যায্যমূল্যে মেডিকেল ডিভাইস বিক্রি করেন?

মেহেদী হাসানঃ আপনি যখন আমাদের ওয়েবসাইটে আসছেন কিছু কিনতে তখন আপনি একটা ওপেন মার্কেটে চলে আসলেন। আপনার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি যখন সার্চ দেবেন তখন ঐ পণ্যটির একই ধরনের অনেকগুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মডেল আপনার সামনে চলে আসবে। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে একটি দুটি নয় অনেক ভেন্ডর পণ্য বিক্রি করে থাকে। ফলে ক্রেতারা মূল্য এবং অন্যান্য তথ্যাদি জেনে সহজেই পছন্দ মতো পন্যটি কিনতে পারেন। যেহেতু বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আছে তাই বিক্রেতারাও সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে ক্রেতারই লাভ হয়।

হেলথ জার্নালঃ সরকারি কি কি সুযোগ সুবিধা পেলে আপনারা আরও ভালভাবে কাজ করতে পারেন?

আলী ইমরান দাইয়ানঃ সরকারের উচিত ভিন্ন ধরনের নতুন উদ্যোগ গুলোর পাশে দাঁড়ানো। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা ব্যাংক লোনের সুবিধা সমূহ বৃদ্ধি করা। এছাড়াও কোন উদ্যোগ সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়ার মত সুবিধা দেশে থাকা দরকার। চলতি অর্থবছরে সরকার স্টার্ট আপদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবি কম। এটা কমপক্ষে ১০০০ কোটি টাকা হওয়া দরকার।

হেলথ জার্নালঃ অনলাইনে মেডিকেল ডিভাইস ব্যবসার ভবিষ্যৎ কী বলে মনে করেন? 

মেহেদী হাসানঃ বর্তমান সময়ে যত গ্রোয়িং সেক্টর আছে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় হচ্ছে হেলথ সেক্টর। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এখানে আমাদের কাজের সম্ভাবনা বাড়ছে। এটা কমবে না। ফলে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আরো নতুন নতুন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠবে। কিছুদিন আগে আমরা ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা দেখলাম সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ঘাটতি  দেখা দিয়েছিল। তো আমরা মনে করি ভবিষ্যতে আমাদের কাজের সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।

হেলথ জার্নালঃ আপনাদের ধন্যবাদ।

আলী ইমরান দাইয়ান, মেহেদী হাসানঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *