বিশ্বে নতুন আতঙ্ক ওষুধ প্রতিরোধী ফাঙ্গাস ক্যানডিডা অরিস

ক্যানডিডা অরিস। ওষুধ প্রতিরোধী ফাঙ্গাস বা ছত্রাক। হাসপাতালে থাকা অণুজীবগুলোর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে আতঙ্কজনক নাম। বিশ্বজুড়ে এই ফাঙ্গাসের আক্রমণে মহামারি দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর সংক্রমণের হার।

২০০৯ সালে জাপানের টোকিও মেট্রোপলিটন গেরিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর কানের ভেতর প্রথম পাওয়া যায় এই ছত্রাক। এটি (ক্যানডিডা অরিস বা সি. অরিস) মানবদেহে রক্তপ্রবাহে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। সাধারণ ছত্রাক যেমন ক্যানডিডা অ্যালবিকান্সের মতো মুখ ও গলায় ক্ষত তৈরি করে এটি।

এই ছত্রাক আমাদের ত্বকে কোনো ধরনের ক্ষতি না করেই বসবাস করে। তবে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা সংবেদনশীল কোনো স্থান যেমন রক্তস্রোত কিংবা ফুসফুসে চলে গেলে এটি সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। এছাড়া নিশ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ এবং ত্বকেও সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।

সারাবিশ্বে সি. অরিস আক্রান্তদের ৬০ ভাগই মৃত্যুবরণ করেন। এই ছত্রাক ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এর সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও অনেক সময়ই সি. অরিসের সংক্রমণকে অন্য কোনো অসুস্থতা বলে ভুল করা হয়। যার কারণে দেয়া হয় ভুল চিকিৎসা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি বলছে, এর ঝুঁকি কমাতে হলে, এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা রয়েছে তা জানতে হবে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ প্র্যাকটিশনার ও ইউসিএল ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. এলাইন ক্লাউটম্যান-গ্রিন বলেন, হাসপাতালের পরিবেশে বেঁচে থাকে সি. অরিস। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন তাই এর সংক্রমণ শনাক্ত হলে তা রোগী এবং হাসপাতাল উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

সাধারণত সি. অরিসের সংক্রমণ সচরাচর খুব একটা হয় না। তবে দীর্ঘ সময় হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে থাকলে এবং চিকিৎসার কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে সি. অরিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক সি. অরিসের সংক্রমণরোধী ভালো ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সি. অরিস ছত্রাক বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে বাধ্য হওয়ায় এর সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ ছত্রাকই কম তাপমাত্রায় মাটিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে সি. অরিস। এর কারণে মানুষের দেহে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় তাদের জন্য মানবদেহে বেঁচে থাকা সহজ।

সংক্রমণের সংখ্যা কমাতে কী করা যেতে পারে?

সংক্রমণের সংখ্যা কমাতে হলে প্রথমেই শনাক্ত করতে হবে যে, এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে কারা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জানতে হবে যে, যারা চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে কাটান, তারাই এ ধরনের সুপারবাগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকেন।

সব হাসপাতালে সি. অরিস একইভাবে শনাক্ত করা হয় না। অনেক সময় এর সংক্রমণকে মুখ ও গলায় ক্ষতের মতো সাধারণ ছত্রাকের সংক্রমণ বলে মনে করা হয় এবং ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়।

উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে প্রাথমিক পর্যায়েই সি. অরিসের সংক্রমণ শনাক্ত করা সম্ভব। আর এর ফলে সঠিক চিকিৎসা দেয়ার মাধ্যমে অন্য রোগীদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব।

সি. অরিস বেশ শক্তিশালী এবং এটি খোলা পরিবেশে অনেক দিন ধরে বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণ ডিটারজেন্ট এবং সংক্রমণরোধী রাসায়নিক দিয়ে একে মেরে ফেলা যায় না। যেসব হাসপাতালে এই সুপার বাগের সংক্রমণ ধরা পড়েছে সেখানে উপযুক্ত পরিষ্কারক রাসায়নিক ব্যবহার করে এর সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে। সূত্র : বিবিসি

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *