১০ দিনে ১৮ হাজারবার ডাউনলোড হয়েছে ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপ

মোবাইল অ্যাপলিকেশন ‘স্টপ ডেঙ্গু’ গুগল প্লে স্টোর থেকে প্রথম দশ দিনে ১৮ হাজারের বেশি বার ডাউনলোড করা হয়েছে। এতে অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ১১ হাজার। শুধু রাজধানী ঢাকা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ থেকে যাচাই-বাছাই করে রাখা হয়েছে প্রায় এক হাজার অভিযোগ। সমাধান হয়েছে ১১২টির।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ-সচেতনতা বাড়ানো এবং এডিস মশার লার্ভা ও সম্ভাব্য প্রজননস্থল সনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা এ অ্যাপটি চলতি মাসের ১৭ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছিল।

জানা যায়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) উদ্যোগে এ অ্যাপটি তৈরি করা হয়। কোনো ধরনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই অ্যাপটির প্রাথমিক ডেভেলপের কাজ করে ই-ক্যাব মেম্বার প্রতিষ্ঠান বিডি ইয়ুথ। সঙ্গে ছিল ই-পোস্ট। একইসঙ্গে অ্যাপটির বর্তমান কনটেন্ট মডারেশনে কাজ করছে আলাদা আলাদা চারটি দল। এর মধ্যে কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট এবং ব্যবহারকারীদের ছবি যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি এখন করছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন এক্সেস টু ইনফরমেশন বা এটুআই বিভাগ।

চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে ই-ক্যাব ছাড়াও অ্যাপটির সঙ্গে ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে আরও ৮টি সংস্থা- দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, বাংলাদেশ স্কাউটস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এটুআই এবং ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

অ্যাপ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যাপটি চালুর পর এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি ডিভাইসে এটি ডাউনলোড করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ১১ হাজার। তবে বেশকিছু সমস্যা ভুল এবং অপ্রাসঙ্গিক হওয়ায় সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে প্রায় সাড়ে চার হাজার অভিযোগ ফিল্টারিং করা হয়। দেশের ৩২টি জেলা থেকে জমা পড়ে এসব অভিযোগ। যার মধ্যে মহানগরী ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ফিল্টারিং করে রাখা হয় প্রায় এক হাজার অভিযোগ। এসব সমস্যার তথ্য দেওয়া হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনকে। সেখান থেকে ১১২টি সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে দুই সিটি করপোরেশন করেছে।

ডিএনসিসির তথ্য কর্মকর্তা আতিক রহমান বলেন, অ্যাপসটি থেকে আমরা তথ্য পেতে শুরু করেছি। যেসব অভিযোগ বা সমস্যা আসছে তার প্রতিটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। যে এলাকায় সমস্যা বেশি সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে লোক পাঠিয়ে সমাধান করা হচ্ছে এবং সবগুলো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অ্যাপটির সার্বিক বিষয়ে ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং স্টপ ডেঙ্গুর জনসংযোগ ইনচার্জ আসিফ আহনাফ বলেন, জনগণ যখনই তাদের আশেপাশে মশার সম্ভাব্য স্থান বা প্রজননস্থল দেখবে সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে অ্যাপে দিতে পারবে। গুগলের সাহায্যে ছবি তোলার স্থানের তথ্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে চলে যাবে। তোলার স্থানে ম্যাপে একটি ‘লাল সংকেত’ দেখাবে। সমস্যার সমাধান হলে আবার সেটি সবুজ হয়ে যাবে।

‘এভাবে ব্যবহারকারীদের এসব ছবি থেকে অ্যাপ নিজেই একটি ম্যাপিং তৈরি করবে যার মাধ্যমে বোঝা যাবে কোথায় সমস্যা আছে, কোথায় সমাধান করা হয়েছে এবং কোথায় সমাধান প্রয়োজন। এভাবে যে স্থানে বেশি লাল দেখাবে সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। তবে এই লাল ও সবুজ সংকেত এখনই দেখা যাচ্ছে না। আমরা এক্সেল শিট এ অ্যাপ থেকে তথ্য পাচ্ছি এখন। আরও প্রায় ১৫ দিন পর ম্যাপিং এ আমরা দেখতে পারব। আর প্রায় এক মাস পর সংকেত দেখতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।’

এদিকে অ্যাপটির সঙ্গে আরও বেশি সংখ্যক ব্যবহারকারীদের যুক্ত করতে কাজ করছে ই-ক্যাব। জনগণের জন্য অ্যাপে দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট।

আসিফ আহনাফ বলেন, অ্যাপটির সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন স্কাউটসের প্রায় ৩৮ লাখ সদস্যকে এর আওতায় আনার কাজ চলছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবহারকারীদের যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের সচেতনতায় বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আমরা রেখেছি। ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও আছে। ডেঙ্গু নিয়ে কেউ যেন আতংকিত না হন বরং ডেঙ্গু হওয়ার আশংকা থাকলে বা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কী করতে হবে; বিস্তারিত এসব তথ্য ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে দেওয়া আছে। তাই এটা ‘টু ওয়ে কানেকটিভিটি’। নাগরিকেরা যেমন তাদের সমস্যা আমাদের জানাতে পারছেন এবং কর্তৃপক্ষ সমাধান করলে তারা দেখবেন। অন্যদিকে সমস্যা মোকাবেলায় কী করতে হবে আমাদের পক্ষ থেকে সেই বার্তাও তারা পাচ্ছেন।

এদিকে অ্যাপটি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এর ব্যবহারকারীরা। তবে কিছু নেতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে।

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নামের এক ব্যবহারকারী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই কার্যকরী একটি অ্যাপ এটি। এটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। আর যিনি পোস্ট করবেন তার পরিচয়ের গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *