লক্ষণবিহীন ডেঙ্গু ভাইরাস এবং করণীয়

আগে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেত। ইদানীং তেমন লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। দৃশ্যমান বা লক্ষণযুক্ত ডেঙ্গু হলে কিছুটা বোঝা যায় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থও হওয়া যায়। কিন্তু লক্ষণবিহীন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেও বুঝতে পারে না যে তারা এই রোগে আক্রান্ত। পরে এই ব্যক্তিরাই কিন্তু অসম ডেঙ্গু ভাইরাসে (যেমন—প্রথম আক্রমণ ডেঙ্গু ১, পরে ডেঙ্গু ২, ডেঙ্গু ৩ বা ডেঙ্গু ৪ ইত্যাদি) আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা জটিল হতে পারে।

ডেঙ্গু যেভাবে অসম হয়
এখন ডেঙ্গুর মৌসুম। এই সময়ে জ্বর হলে অনেকে নিজ দায়িত্বেই ডেঙ্গু শনাক্তকরণে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছে। চিকিৎসকরাও এমন পরামর্শ দিয়ে আসছেন। সমস্যা হলো, ডেঙ্গুর মৌসুমবহির্ভূত সময়ে কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত ওই সময় ডেঙ্গু শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষাগুলো করানো হয় না। কিন্তু এসব রোগীর অনেকের হয়তো আগে ডেঙ্গু হয়েছিল। আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অগোচরে থেকে যাওয়ায় সময়মতো প্রতিরোধব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে না। ঠিক এই ক্যাটাগরির রোগীরাই পরবর্তী কোনো সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জটিল ডেঙ্গুর শিকার হতে পারে।

পরামর্শ
►   ডেঙ্গুর মৌসুম থাকুক আর না থাকুক, ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কারো জ্বর হলেই ডেঙ্গু শনাক্তকরণে রক্ত পরীক্ষা করান। এতে ডেঙ্গু ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া যাবে এবং ডেঙ্গুর বিস্তার রোধেও আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা যাবে।

►  শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনেকে রুটিন টেস্ট করে থাকে। কেউ ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে কি না, রুটিন টেস্টে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে সেটি নিশ্চিত হয়। এই পরীক্ষাগুলো তিন মাস পর পর বছরে চারবার করা যেতে পারে। আগে জানা থাকলে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।

►  সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সারা বছরই প্রতিটি হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রক্ত পরীক্ষায় প্রাপ্ত ডেঙ্গু পজিটিভ রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। এতে ডেঙ্গুর মহামারি রোধে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

►   এলাকাভিত্তিক বা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আগত রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিরীক্ষণ করা যায়। তখন ডেঙ্গু পজিটিভ রোগী বেশি পেলে ব্যাপক প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে।

►   ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশার বংশবিস্তারের উৎসস্থল নির্মূল করা, মশা বিশেষ করে বয়স্ক মশা ধ্বংস করা উচিত। মশার কামড় থেকে রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও বিকল্প নেই। কিন্তু এই কাজগুলো বর্ষা মৌসুমে বেশি বেশি করা দরকার হলেও তা যে নৈমিত্তিক কাজ সে বিষয়টিতে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আগাম সতর্ক হয়ে সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহণই এই ভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র হাতিয়ার। আমরা যেন সেই বিষয়ে মনোযোগী হই।

অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মো. আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া 
লেখক : পরিচালক, বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতাল

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *