শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা রয়েছে ডেঙ্গু ঝুঁকিতে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসে সরকারের নির্দেশ থাকলেও অদ্যাবধি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়নি, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য নিরাপদ স্থান। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেট-বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। স্কুল আঙ্গিনা ও আশপাশে পানি জমে থাকে।যুগান্তর

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হয় না।  শ্রেণিকক্ষগুলো থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন, যেখানে মশা লুকিয়ে থাকতে পারে। একই সঙ্গে অনেক মানুষ থাকায় এডিস মশা একাধিকজনকে কামড়ে তার রক্তের চাহিদা পূরণ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এ স্থাপিত ডেঙ্গু প্রতিরোধ সেলের প্রধান পরিচালক অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, স্কুল-কলেজ থেকে যাতে ডেঙ্গু বিস্তার করতে না পারে, সে জন্য ঈদের ছুটির মধ্যে একদিন পরপর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ফুলের টব, বাথরুমের কমোড, বেসিন এবং প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় পানি জমে না থাকে সেগুলো খেয়াল রাখা হয়েছে। এখন যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে এডিসের প্রজনন ক্ষেত্র থেকে থাকে, সেগুলো হয়তো নজরে আসেনি। আর সারা বছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সামান্য কমলেও বিভিন্ন স্থানে আরও ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১৬১৫ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিল ১৭০৬ জন। অর্থাৎ এ সময়ে রোগী কমেছে ১০৯ জন। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৯৭ জন। যার মধ্যে শুধু আগস্টের ১৯ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ৩৬ হাজার ৩৩৬ জন।

যদিও ডেঙ্গু রোগী আর বাড়বে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা। সোমবার বিকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ কমেছে। আক্রান্তদের সংখ্যার সূচকে নিুগতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি, এই নিুগতি অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট সব ডিরেক্টর ও লাইন ডিরেক্টরের উপস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিভিল সার্জন ও ইউএইচএফপিওদের ডেঙ্গুর প্রতিকার, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জরিপে দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু, শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী। দেশে মোট আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুরোগীর হার ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে এক বছরের নিচে ২ শতাংশ, এক থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু ৮ শতাংশ এবং ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু ১৭ শতাংশ। তাই ঈদের ছুটি শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল-কলেজ খোলার আগে পরিচ্ছন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বদ্ধঘরে, পর্দার আড়ালে, বেঞ্চে-চেয়ারে-টেবিলের নিচে মশার ওষুধ স্প্রে করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। কোনো পাত্রে জমে থাকা পানি থাকলে সেটি ভালোভাবে মেঝে পরিষ্কার করতে এবং ছুটির পর পানি জমতে পারে এমন পাত্র অপসারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. একেএম ছামসুজ্জামান বলেন, স্কুল-কলেজ থেকে ডেঙ্গু নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে সকালে স্কুল শুরুর সময় পিছিয়ে দিতে হবে। যেসব স্কুল খুব ভোরে শুরু হয় সেগুলো একটু পিছিয়ে দিতে হবে। কারণ সূর্যোদয়ের পরের দুঘণ্টা এডিস বেশি কামড়ায়। অন্যদিকে সূর্যাস্তের কমপক্ষে দুঘণ্টা আগে স্কুল বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সময়ে ৩টার দিকে স্কুল বা কলেজ ছুটি দিলে ভালো হয়। তাহলে এডিসের কামড়ের মাত্রা কমে আসবে। তাছাড়া অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।

এসব বিষয়ে বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আমদের দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং নতুন করে যেন রোগী না বাড়ে সেজন্য উন্নত মানের ফগিং মেশিন ও কার্যকর ওষুধ ব্যবহার করে বিস্তীর্ণ এলাকায় ফগিং করে প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা মারতে হবে। পাশাপাশি প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের আঙ্গিনায় ব্যাপক হারে ফগিং করে পুরো এলাকা মশামুক্ত করতে হবে। আর শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্প্রে করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এছাড়া মানুষ ও মশার মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে মশা মানুষকে কামড়াতে না পারে। এক্ষেত্রে ফুল হাতার জামা-পায়াজামা পরা, মশারি ব্যবহার করা, বাড়িতে অ্যারোসল স্প্রে করা, গায়ে মশক নিরোধ স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। 

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *