ডেঙ্গুর মৌসুমে ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রতি পরামর্শ

ডায়াবেটিস রোগীর অতিরিক্ত গ্লুকোজের কারণে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়, ফলে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। যাঁদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ভালো নয় (রক্তের গ্লুকোজ কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশি) তাঁদের ডেঙ্গু জ্বর হলে ক্ষতির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। রক্তের গ্লুকোজের তিন মাসের গড় বা এইচবিএওয়ান সির মাত্রা বেশি থাকলে ডেঙ্গুর জটিলতার ঝুঁকি বেশি তা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত। 

ডেঙ্গু রোগের মৃত্যুর কারণ প্রধানত ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (ডিএসএস)। ডায়াবেটিসের রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাঁদের মৃত্যুহারও অনেক বেশি। 

ডেঙ্গুর এ মৌসুমে ডায়াবেটিসের রোগীরা যা মনে রাখবেন: 

: বাড়িতে বা আশপাশে কারও ডেঙ্গু হলে সতর্ক থাকুন। দিনের বেলা মশারির নিচে ঘুমাবেন, মশানিরোধক ক্রিম ব্যবহার করুন। ডেঙ্গু হলে যথেষ্ট পানি ও তরল পান করবেন, তবে ডায়াবেটিস থাকার কারণে চিনিবিহীন তরল বেছে নিন। যেমন—চিনিবিহীন ফলের রস, খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি। 

: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। এতে জটিলতার ঝুঁকি কমে। খালি পেটে ৬ মিলিমোলের নিচে, খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ মিলিমোলের নিচে এবং এইচবিএওয়ানসি ৭–এর নিচে রাখাকে সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বলে। 

: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা এর জটিলতা থাকলে (যেমন—কিডনি রোগ, প্রস্রাবে আমিষ যাওয়া, হৃদ্‌রোগ) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়াই শ্রেয়। 

: ডেঙ্গু হলেও ডায়াবেটিস রোগীর সাধারণ ওষুধ বন্ধ করা যাবে না, যেমন—ইনসুলিন, মুখে খাওয়ার ওষুধ ইত্যাদি। তবে এসজিএলটি ইনিহিবটর পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডেঙ্গু হলে অরুচি বেড়ে যায়, বমি হতে পারে, রোগী কিছু খেতে পারে না। তাই রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। ইনসুলিন বা মুখে খাওয়ার ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। 

: বেশির ভাগ ডায়াবেটিসের রোগী উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি গ্রহণ করেন। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন বন্ধ রাখাই ভালো। রক্তচাপ কমে যাওয়ার প্রবণতার ওপর নির্ভর করে রক্তচাপের ওষুধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

: ডায়াবেটিসের সঙ্গে কিডনি বা হার্টের জটিলতা থাকলে স্যালাইন দেওয়ার বিষয়ে অতি সতর্কতা প্রয়োজন।

ডা. শাহজাদা সেলিম সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, বিএসএমএমইউ

সূত্রঃ প্রথম আলো

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *