ইবোলার চিকিৎসায় কঙ্গো বিজ্ঞানীদের সাফল্য

কয়েক দশক ধরে ইবোলা আবির্ভূত হয়েছে মানুষের জন্য বড় আতঙ্ক হিসেবে। কারণ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বেঁচে গেছেন এমন লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সম্প্রতি গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে বিজ্ঞানীরা ইবোলার চিকিৎসায় সাফল্য পাবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের গবেষণা বলছে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে ৯০ শতাংশ আক্রান্ত রোগীই বেঁচে যেতে পারেন।

কঙ্গোতে ইবোলা রেসপন্স এর সমন্বয়ক প্রফেসর জিয়ান জ্যাকুয়াস মুয়েম্বে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় বলেছেন, এই রোগ হয়তো খুব শিগগিরই ‘প্রতিরোধ ও চিকিৎসাযোগ্য’ হবে এবং তিনি এ পরীক্ষাকে ‘বছরের সবচেয়ে বড় খবর’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।জিয়ান জ্যাকুয়াস মুয়েম্বে বলেন, ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা কীভাবে হতে পারে তা নিয়ে আমি চার দশক চিন্তা করেছি। তাই এটা আমার জীবনের বড় অর্জন।

এই গবেষণাটি কঙ্গোতে হয়েছে, যেখানে গত আগস্ট থেকে ইবোলায় মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত এক হাজার আটশ।
চারটি ঔষধ ব্যবহার করে পরীক্ষাটি শুরু হয় গত নভেম্বরে। ৭০০ ব্যক্তিকে বাছাই করা হয় চিকিৎসার পরীক্ষার জন্য। এর মধ্যে প্রথম ৪৯৯ জন যে ঔষধ দিয়ে আরোগ্য লাভ করেছেন তা এখন নিশ্চিত।

ড: মুয়েম্বে বলছেন দুটি ঔষধ যেগুলো ল্যাবরেটরিতে আরইজিএন-ইবি৩ ও এমএবি১১৪ নামে পরিচিত -সেগুলো ইবোলার বিরুদ্ধে খুবই সক্রিয়। মূলত চিকিৎসার ধরণটা হলো এমন, যেখানে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করা হয়।

আরইজিএন-ইবি৩ যেসব রোগীদের প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের মৃত্যুর হার কমে ২৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে চিকিৎসা না করলে মৃতের হার ৬০-৭০ শতাংশ।

ড: মুয়েম্বে বলছেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ইবোলার কোনো চিকিৎসা নেই, কোনো টিকা নেই।  যাদের এন্টিবডিসহ ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তারা এক ঘণ্টার মধ্যেই ভালো বোধ করতে শুরু করেন। এটা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে একটি চিকিৎসা। কিন্তু এটা কোনো টিকা নয় এবং রোগীরাও সারা জীবনের জন্য সুরক্ষিত নয়।

তার আশা আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এই পরীক্ষা নিরীক্ষার চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।

মিস্টার মুয়েম্বে ১৯৭৬ সালে যে দলটি ইবোলা চিহ্নিত করেছিলো সেই দলের একজন সদস্য। তিনি বলছেন নতুন আবিষ্কার রোগটির বিস্তার বন্ধ করতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এর প্রভাব হবে অসাধারণ। কারণ মানুষজন ইবোলার প্রতিরোধে চিকিৎসাই নিচ্ছিল না। মানুষ চিকিৎসা কেন্দ্রকে মৃত্যুকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছিলো। এখন যদি দেখে যে মানুষ চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে ও সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরছে তাহলে তারা আর রোগীকে লুকিয়ে রাখবে না। বরং হাসপাতালে নিয়ে আসবে। তাই রোগটির বিস্তার বন্ধ করার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *