মহাচ্যালেঞ্জের সম্মুখীন চিকিৎসা ব্যবস্থা


প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীর হাসপাতালগুলোর শয্যা ছাড়াও ফ্লোর, করিডর, এমনকি সিঁড়িতেও অবস্থান নিয়েছেন রোগীরা। এমনিতেই রয়েছে চিকিৎসক সংকট; তার ওপর রোগীদের ভয়াবহ চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। রয়েছে ডেঙ্গু নির্ণয়ে কিটসের সমস্যা। ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও প্রাথমিকভাবে কিছু ওষুধ ও স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়। সেগুলোও অপ্রতুল। অভাব রয়েছে ডেঙ্গু রোগ শনাক্তের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির। সব মিলিয়ে বর্তমানে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে চিকিৎসা ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের সরকারি পর্যায়ে ৩০ হাজার ও বেসরকারি পর্যায়ে ৬০ হাজার 
চিকিৎসক রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে দেশে ১ লাখ ৬০ হাজার চিকিৎসক থাকার কথা। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে চিকিৎসক খুবই অপ্রতুল। ফলে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তার পরও চিকিৎসকরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত রোগীর চাপ, কোথাও ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটস সংকট, কোথাও ব্লাড সেল আলাদা করার যন্ত্র না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। তার পরও তারা যে কোনো মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বর্তমানে সামান্য জ্বর-সর্দি, মাথাব্যথা হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ছুটছেন মানুষ। এতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট এনএস১, ডেঙ্গু আইজিএম এবং আইজিএম-আইজিজি চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ১০৫-১৬০ টাকা মূল্যের কিট বিক্রি করছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। 
হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেছেন, সরকার ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ ৫শ টাকা। এখন একটি সিন্ডিকেট ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার কিটস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। আমাদের হাসপাতাল বৃহস্পতিবার ৪৫০ টাকা করে কিট ক্রয় করেছে। এখন আমরা না হয় লোকসান দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে পারি। কিন্তু প্রাইভেট হাসপাতালগুলো এটা কী করবে। ফলে বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর পরীক্ষা কম হবে। সেখানে রোগী সেবা না পেয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোয় ভিড় করবে। ফলে লম্বা লাইনে থাকতে হবে। যারা কিট সরবরাহ করছেন তারা যেন বেশি দামে কিট বিক্রি করতে না পারেন, সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া জরুরি। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেছেন, চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। হাসপাতালগুলোয় শয্যার অতিরিক্ত রোগী। তার পরও হাসপাতালের চিকিৎসকরা এদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, গেল বছর ডেঙ্গু এত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েনি। হঠাৎ এত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসক-নার্সসহ সবার প্রতি অনুরোধ, তারাও যেন ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকবেন। 
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১৫শ থেকে ১৬শ রোগী থাকেন। এ ছাড়া আউটডোরে ৪ থেকে ৫ হাজার রোগী আসেন। এসব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার পরও প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হাসপাতাল পরিচালক বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন আড়াইশর বেশি ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এত বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। 
হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ৭৮টি শয্যা রয়েছে। এসব শয্যা ও কেবিন মিলিয়ে মেডিসিন বিভাগের আওতায় ২২১ রোগী ভর্তি। যার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২শ জন। অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্সদের গলদঘর্ম অবস্থা। 
হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার এজাজ আহমেদ বলেন, মেডিসিন বিভাগে ২২৬ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। সরকারের সব থেকে গুরুত্ব ডেঙ্গু চিকিৎসায়। আমাদের চিকিৎসকরা কী যে সার্ভিস দিচ্ছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর বাইরে জেলা-উপজেলা হাসপাতাল পর্যায়ে ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়ছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা প্রদান করতে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর প্রতি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সারাদেশে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা-উপজেলাসহ ৫০৪টি হাসপাতাল রয়েছে। প্রতিদিন শত শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা মেনে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু সেবা প্রদান করতে গিয়ে অতিরিক্ত রোগীর চাপ, জনবল সংকট, ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটস সংকট ও ব্লাড সেল আলাদা করার যন্ত্র না থাকাসহ নানামুখী সমস্যায় চিকিৎসাসেবাকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। 
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান বলেন, আমাদের প্রতিটি হাসপাতালে ডাক্তার সংকট রয়েছে। জরুরি ও বহির্বিভাগ চালাতেই কষ্ট হচ্ছে। আবার বন্যার কারণে প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু। এটি উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে গেছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডাক্তার-নার্সদের ছুটি বাতিল করেছে। সেবা প্রদানে আমরা বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছি। এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান এখন মহাচ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম আবদুর রাজ্জাক জানান, খুলনায় শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গু চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিটস সংকট ছিল। সে কারণে বাইরের চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনের রোগীদের সাময়িক এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার থেকে আর সে সংকট নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধনের বিকল্প নেই। 
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএস১ কিটস ও গ্লুকোজ স্যালাইন মেডিক্যালে আপাতত নেই। এ কারণে এনএস১ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে এবং ঢাকায় লোকও পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আগামীকাল (রবিবার) চলে আসবে। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর এতটাই চাপ যে, অন্য সব ওয়ার্ডের রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আকতারুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত হাসপাতালে ৯৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই ডেঙ্গু রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় খুব বেশি ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসাসেবা বাড়াতে হবে। প্রথম পর্যায়ের রোগীদের ভর্তিও করাবেন না। কারণ সেকেন্ড স্টেজের রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা ও ওষুধ প্রয়োজন হবে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ৭০ রোগী ভর্তি রয়েছেন। শনিবারও অন্তত ২০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রয়েছেন দুই ডেঙ্গু রোগী। দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ তত বাড়ছে। এত ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছি। হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোয় ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু কর্নার নামে আলাদা একটি ইউনিট খোলা হয়েছে। হাসপাতালে ডাক্তার এবং নার্সের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ফলে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিয়ে আপাতত কোনো সমস্যা দেখছি না। 
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুরুতে আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। বিশেষ করে এন্টিজেন এন্টিবডি পরিমাপের কিটসের সংকট ছিল। কিন্তু এখন সেটি কেটে গেছে। আমরা একটি কর্নারও খুলেছি। সিলেটের প্রায় ১ কোটি মানুষের ভরসার প্রধান স্থান হিসেবে আমরা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আশা করি, চলতি বর্ষা মৌসুমের রোগবালাই বা ঈদের সময় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারব। এরই মধ্যে হাসপাতালসংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রংপুরে ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার কিটস শেষের পথে এবং হাসপাতালে স্থানসংকুলান হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদ বলেন, হাসপাতালে ৯২ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিসিন ওয়ার্ডের তিনটি পৃথক ইউনিটে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেড সংকট ও স্থানসংকুলান না হওয়ায় এসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য স্থানীয়ভাবে কিটস সংগ্রহ করা হতো। বাজারে এটিও শেষের পথে। দ্রুত কিটস পাওয়া না গেলে নতুন রোগীদের শনাক্তের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে। 
নড়াইল সিভিল সার্জন ডা. আসাদ উজ জামান মুন্সি বলেন, নড়াইলে ২২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ১২ জন ভর্তি আছেন। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত নড়াইলের মানুষ ছুটিতে বাড়ি আসবেন। তারা ডেঙ্গু রোগ বহন করে আনতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি। সে ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, যেসব জেলা থেকে যে কোনো পরিবহনে নড়াইলের উদ্দেশে আসার আগে ওই পরিবহনে মশক নিধনের স্প্রে করে যাত্রী উঠাতে হবে। একইভাবে নড়াইলে পৌঁছার পর যাত্রীদের নামার আগে মশক নিধন স্প্রে করে অন্তত ১০ মিনিট পর যাত্রীদের নামাতে হবে। আর যদি কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত অবস্থায় নড়াইলে আসেন, তা হলে তাকে নিকটস্থ (নড়াইলে) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, আগস্টের প্রথম দিন ১২০টি কিটস সরবরাহ পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে ৮০টি জেলা সদর হাসপাতালে দেওয়া হয়। বাকি ৪০টি রিজার্ভ রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সরবরাহ করা এসব কিটস (এনএস১) শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া রক্তরস আলাদা করার যে যন্ত্র, তাও নেই। সে কারণে অনেক রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। তা ছাড়া ফলোআপ পরীক্ষার জন্য যে উপকরণ (আইজিএম এবং আইজিই) দরকার, তার সরবরাহ নেই বলে জানান। 
স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. ফেরদৌসী আক্তার বলেন, শনিবার পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৫৮০ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। কোথাও চিকিৎসক বা কর্মীর সংকট নেই। তবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশক নিধনসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। 
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আরিফুর রহমান তালুকদার জানান, ব্লাড সেল সেপারেটর মেশিন নেই। অনেক আগে কোনো একটি সংস্থা ২টি সেল সেপারেটর মেশিন দিলেও তা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালের উপপরিচালক মুসা আল মানসুর কিটের সংকট উল্লেখ করে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়লেও আশানুরূপ কিটস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আইজিই ও আইজিএমসহ ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন হাসপাতালেই করা হচ্ছে। 
নরসিংদী সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি রোগীকে ২৪ ঘণ্টা মশারিতে রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমরা বেশি সমস্যা ফেস করছি রক্তের সেল কাউন্টার মেশিন নেই। 
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে সরকারি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম। ঢাকা শহরের ১২টি সরকারি এবং ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ৪৭টি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এসব হাসপাতালের বাইরে সারাদেশের ৬৪টি জেলা সিভিল সার্জনদের অফিস থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। গতকাল শনিবার (সকাল ৮টা) পর্যন্ত রাজধানীতে ৯৬৫ জন এবং রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৬৮০ জনসহ মোট ১৬৪৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ১৮ জন মারা গেছেন।

মাদারীপুরে গৃহবধূ ও বরিশালে শিশুর মৃত্যু 
মাদারীপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তার নাম নাদিরা আক্তার। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে এ জেলায় তিনজন মারা গেলেন। এ ছাড়া বরিশালে দেড় বছরের শিশু তাওহীদ মারা যায়। 
কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জুলাই উত্তর কৃষ্ণনগর এলাকার আবদুর জব্বার মিয়ার মেয়ে নাদিরা বেগম (৪০) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ১ আগস্ট তার অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার রাতে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। ঢাকা যাওয়ার পথে রাতে নাদিরা মারা যান। 
এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাওহীদ নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাওহীদ বরগুনা সদর উপজেলার ইসাহাক আলীর ছেলে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাব উদ্দিন জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত তাওহীদকে গত ৩০ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার দুপুরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে নেওয়ার দুই ঘণ্টা পর শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীর বাইরে ৮টি বিভাগের ৬৪ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১৫ জন, ময়মনসিংহে ৫২, চট্টগ্রামে ১২৯, খুলনায় ৬৩, রাজশাহীতে ৬৯, রংপুরে ৫৪, বরিশালে ৬৭ এবং সিলেট বিভাগে ৩১ জন। রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোয় এ পর্যন্ত ৪৯০৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ২৩৮১ জন বাড়ি ফিরে গেছেন এবং বর্তমানে ২৫২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 
সুত্র ঃ আমাদের সময়

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *