দেশে উৎপাদিত দুধে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই বলে জানালেন কৃষিমন্ত্রী

ভারতের একটি গবেষণাগারে পরীক্ষা করে বাংলাদেশে উৎপাদিত দুধে স্বাস্থ্যঝুঁকির কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক দেশে পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং আদালতের আদেশের মধ্যে ভারতে পরীক্ষার ফল নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন কৃষিমন্ত্রী।

তিনি জানান, মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, ইগুলু, আরডি ও সাভার ডেইরির পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধ হিসেবে দুটি করে মোট ১৬টি নমুনা পরীক্ষার জন্য গত ১৬ জুলাই পাঠানো হয়েছিল চেন্নাইয়ের এসজিএস পরীক্ষাগারে।

জেনিভাভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এসজিএস গ্রুপ খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের মান পরীক্ষা করে থাকে। বিশ্বজুড়ে তাদের যে আড়াই হাজারের বেশি কার্যালয় রয়েছে, তার একটি ভারতের চেন্নাইয়ে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত দুধের নমুনা নিয়ে এসজিএসের গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) পুষ্টি ইউনিট।

কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা বিএআরসির পুষ্টি ইউনিটের পরিচালক ড. মো. মনিরুল ইসলাম গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে বলেন, “পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতু ও সালফা ড্রাগ পাওয়া যায়নি।

“দেশীয় উৎপাদিত দুধে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। এ নিয়ে উদ্বেগ বা কোনো উৎকণ্ঠা নেই।”

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “বিশ্লেষণ ফলাফলে পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে কোনো প্রকার ভারী ধাতু যেমন লেড, সালফা ড্রাগ ও ক্রোমিয়ামের রিসিডিল বা অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি।”

তিনি জানান, চেন্নাইয়ে পরীক্ষায় শুধু রাষ্ট্রায়াত্ত সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা নমুনায় স্ট্রেপটোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে তা ছিল প্রতি কেজিতে ১০ মাইক্রোগ্রামের নিচে, যা মানবদেহের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার অনেক নিচে (সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ২০০ মাইক্রোগ্রাম/কেজি)।

রাজ্জাক বলেন, এছাড়া প্রাণের একটি নমুনায় ক্লোরামফেনিকলের উপস্থিতি প্রতি কেজিতে শূন্য দশমিক শূন্য ছয় মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে।

“দুধের ক্ষেত্রে এটির কোনো নির্ধারিত মাত্রা পাওয়া যায়নি, তবে কারও কারও মতে শূন্য দশমিক এক পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।”

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্যপণ্যর গুণগত মান বিশ্লেষণে দেশে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত বা অ্যাক্রিডেটেড কোনো পরীক্ষাগার নেই।

স্থানীয় গবেষণাগারের বিশ্লেষণ সক্ষমতা বা মান কতটুকু গ্রহণযোগ্য? বরাবরই তা প্রশ্নবিদ্ধ।

বাংলাদেশের বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণার ফল প্রকাশের পর তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

ওই গবেষণায় বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশ পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল রয়েছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাজারে থাকা সাতটি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা।

এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে হাই কোর্টে রিট আবেদন হলে আদালত বাংলাদেশের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই অনুমোদিত ১৪ কোম্পানির সবগুলোকেই ৫ সপ্তাহ পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়।

তবে আপিল বিভাগে আবেদন করে মিল্ক ভিটাসহ কয়েকটি কোম্পানি তাদের দুধ বিক্রির ছাড়পত্র পেয়েছে।

এদিকে দেশের দুধ নিয়ে ওই সব গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী; তার একদিন বাদেই সংবাদ সম্মেলন করে দুধে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি না থাকার দাবি করলেন কৃষিমন্ত্রী।

সুত্র ঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *