চুয়েটে চিকিৎসককে ছাত্রলীগের মারধর

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসককে মারধর করেছেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।

এর প্রতিবাদে সোমবার দুপুর থেকে মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

শনিবার সকাল ১১টার দিকে মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে মেডিকেল অফিসার খোরশেদুল আলমকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

তার দাবি ‘বাংলা মদ আনতে শহরে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে না পাওয়ায়’ এ হামলা চালানো হয়।

তবে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, এক শিক্ষার্থী অসুস্থ বোধ করায় তাকে শহরে নিতে অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হয়। এসময় দুর্ব্যবহার করায় চিকিৎসকের সাথে ‘ধাক্কাধাক্কি’ হয়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

ডা. খোরশেদ বলেন, “শনিবার সকাল ১১টার দিকে অতনু মুখার্জি ও ফাহাদ হোসেন মেডিকেল সেন্টারে আমার অফিসে এসে বলে, ‘আমাদের র‌্যাগ চলছে, শহরে গিয়ে বাংলা মদ আনতে হবে। তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স দেন’।

“অ্যাম্বুলেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ক্ষেপে গিয়ে বলে, ‘কোথা থেকে আসছস’। এরপর মারধর শুরু করলে আমি উঠে পাশের কক্ষে আশ্রয় নিতে চাই। এসময় তারা ওই কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়ে। সেখানেও মারধর করে।”

হামলার সময় চারজন থাকলেও বাকি দুজনের নাম জানাতে পারেননি ডা. খোরশেদ।

অতনু মুখার্জি ও ফাহাদ হোসেন চুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ ইমাম বাকেরের অনুসারী। গত বছর চুয়েট ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিকে মারধরের অভিযোগও উঠেছিল ছাত্রলীগের এই অংশটির বিরুদ্ধে।

শনিবারের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অতনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এক ছাত্রকে শহরে নিতে অ্যাম্বুলেন্স চাইতে গিয়েছিলাম। তিনি অতীতেও শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। অ্যাম্বুলেন্স চাইতে গেলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান ও বাজে ব্যবহার করেন।

“তার সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এসময় তিনিও ধাক্কা দেন। এর বেশি কিছু না।”

‘বাংলা মদ আনার জন্য’ শহরে যেতে অ্যাম্বুলেন্স দাবির কথাটি ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ দাবি করে অতনু বলেন, “বাংলা মদের জন্য কেউ কি শহরে যায়?”

তিনি বলেন, “ওই চিকিৎসকের দুর্ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ক্ষুব্ধ। পরে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে গেলে তিনি আমাদের হুমকিও দেন। তিনি স্থানীয় বলে প্রভাব দেখান।”

ডা. খোরশেদ রোববার চুয়েটের উপাচার্যকে লিখিত অভিযোগ করেন।

উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বলেন, ঘটনা তদন্তে তিনজন শিক্ষককে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।। এটা তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে কী কারণে অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল এবং তারপর কী হয়েছে। বন্ধের দিন হওয়ায় সেদিন আমরা ক্যাম্পাসে ছিলাম না।”

এদিকে সোমবার বেলা ২টা থেকে মেডিকেল সেন্টারে কর্মবিরতি পালন করছেন সেখানকার ছয়জন চিকিৎসক।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলীতে স্থাপিত চুয়েটে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। কর্মবিরতির কারণে তাদের চিকিৎসা সেবার ‘বিঘ্ন’ ঘটছে বলেও জানান উপাচার্য।

সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *