বাংলাদেশের শিশুরা রয়েছে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

একদিকে ডেঙ্গু জ্বর, বন্যা, অন্যদিকে অপহরণ-পাশবিক নির্যাতন অতিষ্ট করে তুলেছে বাংলাদেশি শিশুদের। চরম সংকট ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে আমাদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তন্মধ্যে গত দেড় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৮০০ জন। উল্লেখ্য, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিশু-কিশোর রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গুজ্বরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মস্তিষ্ক। এটা প্রাপ্তবয়স্কদের তো বটেই অপ্রাপ্তবয়স্ক তথা শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কেও খারাপ প্রভাব ফেলছে। 

সরকারি হিসাব মতে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ৫-৭ থেকে জন হলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলছে, সংখ্যাটা ২০ ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি রয়েছে শিশু!

পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে, এই বন্যার ফলে প্রায় সাত লাখ শিশুর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে।

যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বন্যার পানিতে ডুবে প্রায় ২০ জন মানুষের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আঁতকে ওঠার মতো তথ্য হচ্ছে, এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি রয়েছে শিশু! আরো ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, অধিকাংশ শিশুর বয়স ১০ বছরের নিচে!

বন্যার ফলে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা রয়েছে। শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছরে বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন তথা যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন রকমের সহিংসতার হার কয়েকগুণ বেড়েছে। 

শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, এ বছরের প্রথম ছয়মাসে সারাদেশে ৫৩৯জন শিশু ধর্ষিত হয়েছে! যার মধ্যে ২৫ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক শত্রুতা, পরকীয়ার মতো ঘটনা শিশু নির্যাতনের জন্য দায়ী।

গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর বাগমারায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ছয়বছর বয়সী এক শিশুকে ঘুমন্ত অবস্থায় জবাই করার চেষ্টা চালিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি সফল অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটি বেঁচে যায়।

কিছুদিন আগে নেত্রকোণায় এক শিশুর কাটা মাথা নিয়ে পালানোর সময় এক ব্যক্তি ধরা পড়ে। এ মাসের শুরুর দিকে ঢাকার ওয়ারীতে শিশু সামিয়াকে ধর্ষণের পর ঘাতকেরা জঘন্যভাবে হত্যা করে। শিশু নির্যাতনের এরকম ঘটনা মনে ঘৃণার সঞ্চার করে। 

দেশব্যাপী শিশু অপহরণের ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি রাজশাহী জেলার বেশ কয়েকটা থানায় শিশু অপহরণের খবর শোনা গেছে। 

শিশুদের নিরাপত্তায় পরিবারকেই অধিকতর দায়িত্বশীল হতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে। অন্যকে সচেতন করতে হবে।

সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *