চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি

জনগণের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর) ।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এফডিএসআরের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন এসব দাবি তুলে ধরেন।

চিকিৎসকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক প্রদান করার দাবি জানায় ফাউন্ডেশনটি। এছাড়া বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিনা বেতনে কর্মরত চিকিৎসকদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে বলেও দাবি জানায় সংগঠনটি।

‘নিরাপদ কর্মস্থল আমার অধিকার, রোগীর সুচিকিৎসা আমার অঙ্গীকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলো ছিল- জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবার কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

চিকিৎসকদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিনা বেতনে কর্মরত চিকিৎসকদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারী ও হাসপাতালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত প্রচলিত আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে যথেষ্ট নিরাপত্তাকর্মী এবং প্রবেশপথ, ভেতরের দেয়ালে সন্ত্রাস বিরোধী নির্দেশাবলী লিখতে হবে। বিশেষ হেল্থ পুলিশ ফোর্স গঠন করতে হবে।

বিদ্যমান আইনের ৮৮ ধারা মতে যেখানে চিকিৎসকদের দায় মুক্তির সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, সে বিষয়ে প্রশাসন, পুলিশসহ সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং উল্লেখিত ধারার প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রচলিত আইনের ৩০৪(ক) ধারার অপব্যবহার করে শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো চিকিৎসককে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য গ্রেফতার করা যাবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) জনবল নিয়োগ করে শক্তিশালী করে এর নজরদারি বাড়াতে হবে এবং চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আনা চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগসমূহ তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

বিএমডিসির আইন অনুযায়ী এমবিবিএস/বিডিএস ব্যতীত অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে কর্মরত ডাক্তারদের জন্য সম্মানজনক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।

সরকারি হাসপাতাল সমূহের শূন্য পদে চিকিৎসক পদায়ন করে স্বাস্থ্যখাতে সুশাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি নিয়ে সংঘটিত সব ধরনের দুর্নীতি দূর করতে হবে।

অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। গত এপ্রিলের পরে প্রায় ২৫ জন চিকিৎসককে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে দেখেছি, অনেক হামলকারীই কোনও এক সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীর শেল্টার পায়। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

সম্প্রতি চিকিৎসক নির্যাতন সব জায়গাতেই আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া চিকিৎসকদের ওপর হামলা বিশ্বজুড়েই বাড়ছে উল্লেখ করে ডা. আবুল হাসনাৎ বলেন, হামলা বেড়েছে যেমন সত্যি, তেমনি বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনা এখন চোখের সামনেও বেশি আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের দফতর সম্পাদক ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী, ডা. আসাদুজ্জামান রিন্টু, অধ্যাপক ডা. এমএ সালাম, সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. নোমান চৌধুরী, ডা. জাহিদুর রহামন, ডা. রাহাত আনোয়ার চৌধুরী, ডা. ওমর ফারুক লপ্তি, ডা. সোহেল মাহমুদ, ডা. নাজমুল হোসেন নিপু প্রমুখ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *