প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় যেসব ভিটামিন ও খনিজ থাকা দরকার

প্রোটিন

রোজকার খাদ্যতালিকায় প্রোটিনজাতীয় খাবার রাখা প্রয়োজন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, ডাল, কলা, মটরশুঁটি ও দইয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। পেশির গঠনে এবং শরীরে শক্তি জোগাতে প্রোটিনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বয়ঃসন্ধিকালে ও সন্তান প্রসবের পর শরীরে প্রোটিনের অনেক চাহিদা থাকে।


গাজর, আপেল, স্ট্রবেরি ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়।

ফাইবার

যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের জন্য খুবই উপকারী ফাইবারজাতীয় খাবার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ২১-২৫ গ্রাম আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে ফাইবারজাতীয় খাবার। পাশাপাশি শরীরে শক্তি জোগায়। গাজর, আপেল, স্ট্রবেরি ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়।

ভিটামিন এ

ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাছাড়া এটি ত্বক ভালো রাখতেও সহায়তা করে। টমেটো, তরমুজ, পেয়ারা, ব্রোকলি, পেঁপে, পাকা আম, মিষ্টিকুমড়া, গাজর, দুধ, কলিজা, লালশাক, বিভিন্ন সবুজ শাক, ছোট মাছে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর টিস্যু গঠনে ও কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে ‘এ’ ভিটামিন। নিয়মিত গ্রহণে ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায় ও তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

Vitamin B: Best Food Sources and Signs of Deficiency

ভিটামিন ‘বি’

অনেকেই জানেন না, ভিটামিন ‘বি’ শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে ভিটামিন বি৬। আবার এর অভাবে হতে পারে ডিমেনশিয়া। ভিটামিন ‘বি’ গ্রহণে কমে হূদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডিপ্রেশন, ক্যান্সার ইত্যাদি হওয়ার ঝুঁকি। তাই প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন ভিটামিন ‘বি’সমৃদ্ধ মাছ, মাংস, বিনস, ওটমিল, পালংশাক, ছোলা, কলা, মিষ্টিআলু, কাজুবাদাম ইত্যাদি খাবার।

Foods High in vitamin C on wooden board. Healthy eating. Flat lay

ভিটামিন ‘সি’

রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এই ভিটামিন। সাইট্রাস ফল, যেমন কমলা, লেবু, জাম্বুরা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে। আবার কাঁচামরিচ, ব্রোকলি, সবুজ শাক ও জলপাইয়ে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই ভিটামিন। এটি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে ভিটামিন ‘সি’-র তুলনা নেই। শরীর পুনর্গঠনেও সাহায্য করে এই ভিটামিন। ক্যান্সার প্রতিরোধক এই ভিটামিন প্রতিদিনই গ্রহণ করতে হবে।

ভিটামিন ‘ডি’

শক্তিশালী হাড় গঠনে সহায়তা করে ভিটামিন ‘ডি’। সূর্যের আলো ভিটামিন ‘ডি’র গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়া সামুদ্রিক মাছ, কমলার রস, দুধ, ডিমের কুসুমে ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘ডি’ শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এটি পেশির গঠন ও হাড় ভালো রাখতে কাজ করে। ভিটামিন ‘ডি’ প্রিমেন্সটুয়াল সিনড্রোমের উপসর্গ কমায়। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে হাঁপানি বা হাড়ের সমস্যা হতে পারে।

ভিটামিন ‘ই’

শরীরের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজনীয়তা অনেক। ভিটামিন ‘ই’ খুব ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালস থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়, ফলে দেহের কোষ ভালো থাকে। ভিটামিন ‘ই’ বয়স বৃদ্ধি রোধ, হার্ট সুস্থ রাখা, ক্যান্সার প্রতিরোধ, ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পালংশাক, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে।

আয়রন

বিশেষ করে নারীদের আয়রনজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। গরুর মাংস, কাঁঁচকলা, কলিজা, কচুর লতি, ডালিম ইত্যাদির মধ্যে আয়রন রয়েছে। আয়রন শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের রক্তশূন্যতা ও মানসিক অবসন্নতা দেখা দিতে পারে। তবে আয়রনজাতীয় খাবারের সঙ্গে লেবু খেতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ ছাড়া শরীর ভালোভাবে আয়রন শুষে নিতে পারে না।

ক্যালসিয়াম

হাঁড় ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে হলে ক্যালসিয়ামজাতীয় খাবার নিয়মিত খেতেই হবে। দুধ, দই, মটরশুঁটি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়াম পেশির গঠনেও সাহায্য করে।

ম্যাগনেশিয়াম

ম্যাগনেশিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। এটি পেশির কার্যক্রমকে ভালো রাখে; শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে কাজ করে। কাঠবাদাম, শাক, শিমের বিচি ইত্যাদিতে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়। ত্রিশের বেশি বয়সের নারীদের ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণ করা উচিত।

পটাশিয়াম

পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার হূদরোগের আশঙ্কা দূর করে। প্রতিদিন একজন ব্যক্তির ৪ দশমিক ৭ গ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করা উচিত। সয়াবিন, কলা, আলু, বিট, টমেটো, তরমুজ ইত্যাদির মধ্যে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এটি কার্বোহাইড্রেটকে ভাঙতে সাহায্য করে ও হূিপণ্ডের গতি ঠিক রাখে।

সূত্র: ওয়েবএমডি ও হেলথ

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *