হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ

মানিকগঞ্জের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের রোগীদের  নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হাসপাতালটির রোগীদের খাবার সরবরাহ করার জন্য ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আফিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে (মো. পিন্টু মিয়া) টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আফিয়া এন্টারপ্রাইজকে হাসপাতালটিতে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হলেও যাবতীয় খারার সরবারহ করছে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসের ভাগিনা জুলহাস মিয়া। প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুইটা পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম, এক চা চামচ চিনি এবং দুপুরে ৭ দশমিক ৫০ গ্রাম ওজনের সিলভারকাপ মাছ, ১০০ গ্রাম মোটা চালের ভাত, ডাল ও ভাজি মেশানো তরকারি দিতে দেখা যায়। তবে রাতে কোনো খাবার দিতে দেখা যায়নি।

কিন্তু টেন্ডারের শর্ত অনুয়ায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালটিতে সপ্তাহে রোগীদের চারদিন মাছ এবং দু’দিন মাংস দেওয়ার কথা। প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর জন্য প্রতিদিন ১২৫ টাকা খাবারের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের সকালে দুইটি পাউরুটি, দুইটি সিদ্ধ ডিম, একটি কলা, ২০ গ্রাম চিনি। দুপুরে ও রাতে ১০০ গ্রাম মাছ, ২০০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম ডাল এবং পরিমাণ মত সবজি দেওয়ার কথা। কিন্তু সিলভারকাপ, বার্মিজ রুই, তেলাপিয়া মাছ, মোটা চালের ভাত, পচা-বাসি তরকারিসহ নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও পরিমাণে কম সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী রোগীরা।

রোগীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি কয়েকবার বলার পরও কোনো কর্ণপাত করেনি ঠিকাদারের নিযুক্ত লোকজন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দৌলতপুর উপজেলার চকমিরপুর এলাকার মৃত আব্দুল হাকিম মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া (৭২) বলেন, আমি তিনদিন যাবত হাসপাতালে ভর্তি। সকালে দুইটা পাউরুটি আর একটু চিনি দিছিলো, রুটি বাসি থাকায় খাইতে পারি নাই। দুপুরে অল্প কয়টা ভাত দিছিলো সঙ্গে আধা পিস (হাফ) মাছ দিছিলো লগে আবার তরকারিও দিছে। মাছ অপরিষ্কার থাকায় খাওয়া যায় নাই তাই ফালাইয়া দিছি, আবার রাতে খাবারও দেয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী বলেন, এখানে আফিয়া এন্টারপ্রাইজের (প্রোপাইটার মো. পিন্টু মিয়া) নামে কাগজে কলমে থাকলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবারহ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসের ভাগিনা জুলহাস মিয়া। তাদের বার বার বলার পরেও খাবারের মান ভালো করছে না। বেশি কিছু বলতেও পারি না যদি কোনো ঝামেলা করে।

আফিয়া এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মো. পিন্টু মিয়া বলেন, কাগজে কলমে আমার নামে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে টেন্ডার হলেও আমি কোনো দিনও ওই হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করি নাই। ওই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস আমার কাছ থেকে মৌখিকভাবে খাবার সরবরাহ করার জন্য অনুমতি নেয়, এখন হাসপাতালে সেই খাবার সরবারহ করে না অন্য কেউ করে তা আমি জানি না।

দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি হাসপাতালে কোনো খাবার সরবারহের সঙ্গে জড়িত না তবে আমার ভাগিনা (জুলহাস) খাবার সরবারহ করে শুনেছি।

জুলহাস মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয় মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে জানাবো যাতে পরিবেশ ভালো থাকে এবং মানসম্মত খাবার রোগীদের সরবরাহ করে।

সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *