গত ২০ বছরে বাংলাদেশে হৃদরোগে মৃত্যুর হার বেড়েছে ৪৭গুন!

গত ২০ বছরে হৃদরোগে মৃত্যুর হার বাংলাদেশি পুরুষের ক্ষেত্রে ৩২ গুণ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৪৭ গুণ বেড়েছে। সবচেয়ে আতঙ্কের ব্যাপারটি হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়ছে।

গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে বলে জানান, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান।ডা. রহমান মনে করেন, তরুণ প্রজন্মের বসে থাকা, বসে কাজ করা, অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন, খাবারে ভেজাল, মানসিক চাপ সহ নানা কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের হার খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বিশ্ব জুড়ে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কার্ডিওভাসকুলার রোগে মারা যায়, যা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ৩১ শতাংশ। এই মৃত্যুর মধ্যে ৮৫ শতাংশ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের কারণে হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে করোনারি হৃদরোগের কারণে তিন চতুর্থাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বিপজ্জনক যা প্রায় ১৪.৩১ শতাংশ। 

সারাবিশ্বে নারী ও পুরুষের মধ্যে বর্তমানে সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ বলে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে মনে করা হচ্ছে। ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনী হৃদযন্ত্রের একাংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে হার্ট অ্যাটাক হয়। যদি ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনীকে দ্রুত পুনরায় চালু করা না যায়, তাহলে সেই ধমনী দ্বারা চালিত হৃদযন্ত্রের অংশটি কর্ম অক্ষম হতে শুরু করে। বুকে ব্যাথা, তীব্রতা/বুকের ভিতরে চাপ অনুভব, বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা ইত্যাদি লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং হার্ট অ্যাটাকের আগে বেশ কয়েক ঘণ্টা, দিন কিংবা সপ্তাহের জন্য চলতে থাকে। 
ডা. রহমান আরও জানান, মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। হৃদযন্ত্রের একাংশে রক্তপ্রবাহ আটকে গেলে, সাধারণ রক্ত জমাট বেঁধে গেলে হার্ট অ্যাকাট হয়। স্ট্রোক হল ব্রেন বা মন্তিষ্কের অ্যাটাক, যেখানে অত্যাবশ্যক রক্তপ্রবাহ আর অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্কে চলাচলকারী কোন একটি ব্লাড ভেসেল বা রক্তবাহ জমাট বেঁধে গেলে বা ফেটে পড়লে স্ট্রোক হয়। অন্যদিকে, হৃদযন্ত্র অস্বাভাবিক ছন্দে চলতে শুরু করলে এবং হঠাৎ করে অচল হয়ে পড়লে আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এক কথায় বলা যায় যে, হার্ট অ্যাটাক হল সংবহন-এর সমস্যা আর আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল একটি ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা।

বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর ১১.৮ শতাংশ স্ট্রোকের কারণে হয়ে থাকে, যে কারণে বিশজুড়ে হৃদরোগের পরেই স্ট্রোক হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ।

কখনও কখনও, হাত থেকে শরীরের বাম দিকে নীচের অংশ পর্যন্ত একটা উপসর্গমূলক ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে যা বিপদের লক্ষণ। বুকে ব্যাথা কিংবা চাপ অনুভূতি যদি গলা কিংবা চোয়াল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা হল হার্ট অ্যাটাকের স্পষ্ট লক্ষণ।  
 
এছাড়াও, যারা নিয়মিত কাজ যেমন সিঁড়ি চড়া, দ্রুত হাটা-হাটি ইত্যাদির পর খুব আকস্মিক ক্লান্ত কিংবা জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন, তাদের অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান পরামর্শ দেন, ‘প্রধানত জীবনযাপনের সমস্যা আর মধ্য বয়সের শুরুতেই মানসিক চাপের কারণে এমনকী তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাকের হার খুব দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চ ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের মাত্রা আর অস্বাভাবিক মাত্রায় রক্তচাপের ফলে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন ব্যধি ঘটে যা অনেকটাই একটা সক্রিয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে যার মধ্যে রয়েছে খাদ্য সংক্রান্ত শৃঙ্খলা, দৈনিক ফিটনেস অভ্যাস, ধূমপান, মদ্য জাতীয় অথবা অন্যান্য মাদক দ্রব্য সেবন ত্যাগ করা। পরিবারে হৃদরোগের নমুনা থাকা ব্যক্তিদের আর যারা হৃদরোগ প্রবণ তাদের নিয়মিত ব্যবধানে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে হবে’।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *