স্তন ক্যান্সার : কারণ ও চিকিৎসা

প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সারযুক্ত গোটা ও আশপাশের কিছু অংশ অপারেশন করে ফেলে দিলে এবং পরবর্তীকালে রেডিওথেরাপি দিলে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন

ক্যান্সার কথাটি শোনামাত্র মানুষের মনে সৃষ্টি হয় এক বিভীষিকার। মহিলাদের কাছে তেমনি এক বিভীষিকার নাম স্তন ক্যান্সার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকায় প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন মৃত্যুবরণ করেন। স্তন ক্যান্সারের এ পরিসংখ্যান খুবই আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান হয়নি, তাই স্তন ক্যান্সারের সঠিক হার জানা যায়নি। তবে এ হার যে খুব কম তা বলা বাহুল্য।স্তন ক্যান্সারের কারণ কী : স্তন ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি, তবে মহিলাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। * বংশগত বিষয় : স্তন ক্যান্সারের একটি কারণ হলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ত্রুটিযুক্ত জিন। এসব জিনের মধ্যে রয়েছে BRCA 1 এবং BRCA 2

* পারিবারিক ইতিহাস : একই পরিবারের দুজন বা তার বেশি নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে। একই পরিবারের সদস্যদের অন্য ক্যান্সার থাকলে। ৪০ বছরের কম বয়সী একজন নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে। * শ্বেতাঙ্গদের বেশি হয়।

অন্যান্য বিষয় : সন্তানহীনতা কিংবা বেশি বয়সে সন্তান হলে। খুব অল্প বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হলে কিংবা বেশি বয়সে ঋতু বন্ধ হলে। শিশুকে বুকের দুধ না দেওয়া। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কী : বেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার প্রথম লক্ষ করা যায় স্তনে একটি ব্যথাহীন পিন্ডের আকারে। এটি প্রথমে ছোট আকারে হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই একটি গোটা বা নডিউলের আকারে দেখা দেয়। নিচের কিছু লক্ষণ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত- স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন, স্তনের চামড়ায় পরিবর্তন, স্তনের বোঁটা ভিতরের দিকে

ঢুকে যাওয়া, স্তনের বোঁটা থেকে তরল পদার্থের ক্ষরণ, বগলে লসিকাগ্রন্থি বড় হওয়া।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এফএনএসি, এক্সিশন বায়োপসি প্রভৃতি।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার শনাক্তকরণ : এ ক্ষেত্রে সেলফ এক্সামিনেশন অর্থাৎ নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা উচিত। ২০ বছর বয়স থেকে প্রত্যেক মেয়েরই এটা করা উচিত। কিভাবে এ পরীক্ষা করতে হবে তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।

চিকিৎসা : স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সারযুক্ত গোটা ও আশপাশের কিছু অংশ অপারেশন করে ফেলে দিলে এবং পরবর্তীকালে রেডিওথেরাপি দিলে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন। রোগ নির্ণয়ে দেরি হলে এবং ক্যান্সার পুরো স্তনে ছড়িয়ে পড়লে তখন পুরো স্তনটিকেই অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলে দিতে হয়। একে বলে মাসটেক্টমি। এরপর রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। এ চিকিৎসায় ৮০-৮৫ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে এসবক্ষেত্রে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়। অন্যথায় জটিলতা বাড়ে।  

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *