বিএসএমএমইউতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক নিয়োগে মৌখিক সাক্ষাৎকার চলাকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়েছে। সকাল পৌনে ৯টা থেকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০ জন নিয়োগপ্রত্যাশী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বেলা সোয়া ১১টায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনের জন্য নিয়োগপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা উপাচার্য কার্যালয়ের গেটে অবস্থান নেয়। ১৫ মিনিট স্লোগান দেয়ার পর পুলিশ তাদের বাঁশি বাজিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে আন্দোলনকারীদের ভবনের গেট থেকে ২০ গজ দূরে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএসএমএমইউর গেট, গেটের ভেতর ও মূল ভবনের ভেতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিএসএমএমইউর ভিসি তার অনিয়ম ঢাকতে, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ঢাকতে এর আগেও আনসার দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছেন, এবার পুলিশ পাঠিয়েছেন। আমরা কোনোমতেই বিএসএমএমইউ থেকে যাব না। প্রয়োজনে আমরা থানায় যেতে রাজি আছি।’

আরেকজন আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা বানচাল করতে আসিনি, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে এসেছি। শুধুমাত্র ভিসির সঙ্গে কথা বলতে চাই।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াকে সভাপতি ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল হান্নানকে সদস্যসচিব করে গঠিত ১০ সদস্যের নিয়োগ কমিটি মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে। দুপুর ১টা থেকে আরও ১৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত সাক্ষাৎকার চলবে।

আজ সোমবার সকালে সরেজমিন ভিসি ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আনসার বাহিনীর একাধিক সদস্য প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এ প্রবেশপথে রোগী ও তাদের স্বজনকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ডাক্তার বা অন্য কারও পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তবেই প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। দোতলায় উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে পুলিশি পাহারা দেখা যায়।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে উপাচার্যের পদত্যাগ ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের দাবিতে তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান গ্রহণ কবেন। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ একজন চিকিৎসক জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এসে তাদের ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের ব্যাপারে রাব্বানী তার অফিসিয়াল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। আজ সকাল বেলা তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বটতলায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ও আনসারবাহিনীর সদস্যরা তাদের বের হতে দেননি বলে তারা জানান।

নির্ভরযোগ্য্য সূত্রে জানা গেছে, আজ থেকে শুরু হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষা প্রতিদিন সকালে ৩৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও আগামী শনিবার (১৫ জুন) থেকে আরও ১৫ জন করে অর্থাৎ প্রায় ৫০ জন পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে।

নির্দিষ্ট সময় ৮ জুলাইয়ের আগেই মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া। এ ছাড়া প্রথম দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিলের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওদের কাজ ওরা করেছে, আমরা আমাদের কাজ করব।’

পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অভিযোগ এনে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন অকৃতকার্য কয়েকজন পরীক্ষার্থী।

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘উচ্চ আদালত যদি নির্দেশ দেন তাহলে মৌখিক পরীক্ষা বন্ধ বা বাতিল করা হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা চলবে।’

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *