প্রসবজনিত ফিস্টুলা কি এবং করনীয়

পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশে প্রসবজনিত জটিলতা কমে যাওয়া বা না থাকার কারনে মহিলাজনিত ফিস্টুলার মত একটি নিদারুন রোগ সেখানে আর দেখা যায় না। যার ফলশ্রুতিতে ‌ওই সকল উন্নত দেশগুলেতে প্রসবজনিত বা মহিলাজনিত ফিস্টুলা সেবাদানকারী হাসপাতাল গুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। আমেরিকা, ইউরোপ থেকে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মুল হয়েছে প্রায় ১০০ বছর আগে। প্রসবজনিত বা মহিলাজনিত ফিস্টুলা রোগ নিয়ে বর্তমানে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো মারাত্মকভাবে ভুগছে। আফ্রিকা ও এশিয়ার প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে লক্ষ লক্ষ নারী এই অবর্নণীয় সমস্যা নিয়ে বেচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে। প্রসবজনিত বা মহিলাজনিত রোগ শুধু একটি নিদারুন রোগ নয়, এ যেন এক নিষ্ঠুর নিয়তিও বটে। 

একজন সাধারণ সচেতন মানুষ হিসাবে একবার কল্পনা করুন- একজন মহিলা তার প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, দিনে-রাতে সবসময় তার প্রসব/মাসিকের রাস্তা দিয়ে প্রস্রাব ঝরছে, তার পরিধেয় কাপড় ভিজে যাচ্ছে, সে বিছানায় বসা এমনকি ঘুমাতে পারছে না, কখনও কখনও তার প্রস্রাব পায়খনা উভয়ই ঝরছে, শরীর থেকে অনবরত ঝাঁজালো দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, সবসময় বিষন্নতায় ভুগছে, নিজের পরিবারের লোকজন আত্মীয়-স্বজন দূরে সরে যাচ্ছে, জায়গা হচ্ছে না নিজের পরিবার বা সমাজের কোথাও। সবকিছুর আড়ালে চলে যাওয়া বিপন্ন এক দুর্বিসহ জীবন- এটাই হলো ‘মহিলাজনিত ফিস্টুলা।’

মহিলাজনিত ফিস্টুলা কি? মহিলাজনিত ফিস্টুলা হলো- মাসিকের বা প্রসবের রাস্তার সাথে মূত্রথলি/মুত্রনালী অথবা মলাশয়ের সাথে এক বা একাধিক অস্বাভাবিক ছিদ্র হয়ে যুক্ত হওয়া- যার ফলে মাসিকের রাস্তা বা প্রসবের রাস্তা দিয়ে দিনে-রাতে সবসময় প্রস্রাব অথবা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরে। 

মহিলাজনিত ফিস্টুলার কারণ : মহিলাজনিত ফিস্টুলা হওয়ার কারণ মূলতঃ দুটি। ১) প্রসবজনিত কারণে ফিস্টুলা ২) অস্ত্রপচারজনিত কারণে ফিস্টুলা। এছাড়া আঘাতজনিত কারনেও ফিস্টুলা হতে পারে। যেমন- দুর্ঘটনাজনিত কারণে, দলবদ্ধ ধর্ষণের কারণ ইত্যাদি।

প্রসবজনিত ফিস্টুলা : প্রসবজনিত ফিস্টুলা হয় মূলতঃ দীর্ঘস্থায়ী বা বাধাগ্রস্থ প্রসবের ফলে। প্রসব দীর্ঘস্থায়ী অর্থাৎ ১২ ঘণ্টার বেশি হলে মহিলাদের ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা মায়ের প্রসব রাস্তার নরম অঙ্গ সমূহকে চাপ দিয়ে রাখে। বাচ্চার মাথার এই চাপের ফলে মায়ের প্রসবের রাস্তার নরম অঙ্গ সমূহের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্থ ও বন্ধ হয়ে যায়। যদি প্রসব দীর্ঘস্থায়ী হয় (১২ ঘণ্টার বেশি), তাহলে মায়ের ওই চাপে পড়া অঙ্গ সমূহে পচন ধরে এবং খসে পড়ে। এর ফলে মাসিকের রাস্তা বা প্রসবের রাস্তার সাথে মূত্রথলি/নালী অথবা পায়খানার রাস্তা অথবা উভয়ের মধ্যে এক অস্বভাবিক ছিদ্র তৈরি হয়। এর ফলে প্রসবের বা মাসিকের রাস্তা দিয়ে সবসময় অথবা মাঝে মাঝে প্রস্রাব অথবা পায়খানা অথবা উভয়ই ঝরতে থাকে। এই অবস্থাটিকেই প্রসবজনিত ফিস্টুলা বলে।

অস্ত্রপচারজনিত ফিস্টুলা : অস্ত্রপচারজনিত ফিস্টুলা সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চার জন্মের সময় অসাবধনতা বসতঃ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ফিস্টুলা হয়। এছাড়া মহিলাদের তলপেটে, যোনীপথে বা জরায়ুতে অন্য যেকোনো ধরনের অপারেশনের সময়ও অসাবধনতা বসতঃ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ফিস্টুলা হতে পারে।

কেথায় চিকিৎসা পাওয়া যায় : ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে এন্জেন্ডারহেলথ্ এর ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প ফিস্টুলা রোগীদের নিয়ে কাজ করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ফিস্টুলা আক্রান্ত মহিলাদের তার বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসা থেকে শুরু করে ডাক্তারি পরীক্ষ-নিরীক্ষা সহ চিকিৎসা ব্যয় সম্পুর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করে থাকে। 

ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্পের মাধ্যমে যেসকল হাসপাতালে বিনামূল্যে এই সেবা প্রদান করা হয় সেগুলো হলো- ১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা ২) আদ্-দ্বীন হাসপাতাল, বড়মগবাজার, ঢাকা ও বয়েরা, খুলনা ৩) ল্যাম্ব হাসপাতাল, পার্বতীপুর, দিনাজপুর ৪) কুমুদিনী হাসপাতাল, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল ৫) মাম্স হাসপাতাল, ইস্কাটন, ঢাকা ৬) ডাঃ মুত্তালিব কমিউনিটি হাসপাতাল, বিজয়নগর, পল্টন, ঢাকা। এছাড়া ন্যাশনাল ফিস্টুলা সেন্টার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল সহ সরকারি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল গুলোতে এই সেবা পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশে ফিস্টুলা হওয়ার অনেকগুলো কারনের মধ্যে বাল্যবিয়ে, কুসংস্কার, অশিক্ষা, দারিদ্রতা, নুন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা, প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করা অন্যতম।

এন্জেন্ডারহেলথ্ এর ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প “আমরা কিশোরী, ফিস্টুলা মুক্ত দেশ গড়ি” শিরোনামে একটি নতুন উদভাবনী মূলক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। যা প্রকৃত পক্ষে ফিস্টুলা প্রতিরোধে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। “আমরা কিশোরী, ফিস্টুলা মুক্ত দেশ গড়ি” কর্মসূচীর মাধ্যমে বাংলাদেশের একেবারে প্রতন্ত অঞ্চল যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বা গড়ে উঠে নাই সেই সকল অঞ্চলে মহিলাজনিত ফিস্টুলা প্রতিরোধে ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা বিশেষভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে। 

বাংলাদেশে প্রতিবছর ৯ম ও ১০ম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া মেয়ের আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ এবং প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ মহিলা সন্তান জন্ম দেয়। “আমরা কিশোরী, ফিস্টুলা মুক্ত দেশ গড়ি” এর মূল ধারণাটি হলো- এই যে ১৫ লাখ মেয়ে ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে পড়ছে তারা যদি প্রত্যেকে তার বাড়ির পাশের ২ জন করে গর্ভবতী মহিলার মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন এর ওপর কাউন্সেলিং করে তাহলে সমগ্র বাংলাদেশের সকল গর্ভবতী মহিলা কাউন্সেলিং এর আওতায় আনা সম্ভব। যার ফলে সকল মা-ই নিরাপদ গর্ভধারণ ও নিরাপদ প্রসব সেবার আওতায় আসবে। যা কিনা মা ও শিশু মৃত্যু রোধ এবং সামগ্রিক মাতৃস্বাস্থ উন্নয়নে বিশেষ করে মহিলাজনিত ফিস্টুলা প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা রাখবে। 

এই কর্মসূচীর আওতায় নির্বাচিত কর্মএলাকায় একটি গ্রামের ৯ম ও ১০ম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা তাদের গ্রামের একটি সামাজিক মানচিত্র তৈরি করে। এই সামাজিক মানচিত্রে গ্রামের সকল স্থাপনা ও যোগাযোগ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত হয়। মেয়েরা তারপর ওই গ্রামের নব-বিবাহিত মহিলাদের তালিকা তৈরি করে, গর্ভবতী মহিলাদের তালিকা তৈরি করে, গর্ভবতী মহিলাদের এএনসি সেবা গ্রহনের তারিখ লিপিবদ্ধ করে, গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব পরিকল্পনায় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে, প্রসবের স্থান হাসপাতাল নির্বাচনে সহযোগিতা করে, গর্ভকালীন ৫টি বিপদচিহ্ন সম্পর্কে সচেতন করে, প্রসবপূর্ব ৩টি বিলম্ব সম্পর্কে অবহিত করে, প্রসব পূববর্তী ও পরবর্তী সেবা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করে, সদ্যজাত শিশুর শালদুধ খাওয়ানোর পরামর্শ প্রদান করে, শিশুর টিকা গ্রহণের নিয়ম ও দিন নির্বাচনে সহযোগিতা করে। এছাড়া ওই গর্ভবতীর পরিবারের অভিভাবকদের গর্ভবতীর স্বাস্থ্য বিশেষ করে মহিলাজনিত ফিস্টুলার মত রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশেষ ভাবে অবহিত করে। কিশোরী মেয়েরা বাল্য বিয়ের কুফল, সামাজিক কুসংস্কার ইত্যাদি সম্পর্কে তাদের নিজেদের পরিবারে ও তাদের প্রতিবেশীদের সাথেও আলোচনা করে। 

কিশেরী মেয়েরা প্রথমে এন্জেন্ডারহেলথ্ এর ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প কর্তৃক আয়োজিত ফিস্টুলা সম্পর্কে একটি এক দিনের অবহিত করন কর্মশালায় মাধ্যমে ফিস্টুলা সম্পর্কে বিশেষ ধারনা লাভ করে। অবহিতকরণ সভার পর কিাশোরী মেয়েরা ফিস্টুলা কি, কিভাবে হয়, কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, কিভাবে ফিস্টুলা চিহ্নিত করা যায়, ফিস্টুলা রোগী চেনার উপায় কি, রোগীকে কোথায় রেফার করতে হয়, কোথায় এই রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করে। তার নিজ গ্রামে ফিস্টুলা রোগী থাকলে ৪ প্রশ্নের চেকলিস্টের মাধ্যমে হলুদ কার্ডটি সঠিকভাবে পূরণ করে সঠিক জায়গায় প্রেরণ করে। চিকিৎসা শেষে ওই মহিলা যখন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, তখন তাকে তার পুনর্বাসনেও তথ্য প্রদান করে সহযোগিতা করে। 

৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশেরী মেয়েরা এন্জেন্ডারহেলথ্ এর ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প কর্তৃক আয়োজিত ফিস্টুলা সম্পর্কে একটি এক দিনের অবহিতকরণ কর্মশালার পর তার নিজ গ্রামে সামগ্রিক মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ করে ফিস্টুলা প্রতিরোধে যে কাজ করে, সফলভাবে এই কাজ শেষ করার জন্য ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্প তাদের ফিস্টুলা চ্যাম্পিয়ন হিসাবে সনদ প্রদান করে মূল্যায়ন করে থাকে। ফিস্টুলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পূর্বে তাদের একটি  দুই পাতার মূল্যায়ন কার্ড সঠিকভাবে পুরন করতে হয়। মূল্যায়ন কার্ডে মোট ৫টি প্রশ্ন ও উত্তর পূরণের ঘর  থাকে। উক্ত ৫টি প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে পূরণ করে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসসিপি ও তার নিজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মূল্যায়ন করে থাকেন। মূল্যায়ন কার্ড যাচাই-বাছাই করার পর সফলভাবে কার্যক্রম শেষ করার পর তাদের “ফিস্টুলা চ্যাম্পিয়ন” সনদ প্রদান করা হয়। এই সনদ পত্র তার পড়াশুনা শেষে পরবর্তী জীবনে কাজে লাগতে পারে। সামগ্রিক মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন বিশেষ করে ফিস্টুলা প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে তাদের সাথে স্থানীয় অনেক সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে পরিচয় হয়। 

“আমরা কিশোরী, ফিস্টুলা মুক্ত দেশ গড়ি” এই কর্মসূচীর একটি বিরাট অর্জন হলো- ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশেরী মেয়েরা তারা নিজেরা ১৮বছরের আগে বিয়ে করবে না মর্মে শপথ নেয় এবং নিরাপদ গর্ভধারণ ও নিরাপদ প্রসবের জন্য এএনসি, পিএনসি, প্রসব পরিকল্পনা, পুষ্টি, পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে নিজেরা বিশেষ জ্ঞান লাভ করে যা তাদের পরবর্তী জীবনে খুবই কাজে লাগে। 

বাংলাদেশে ফিস্টুলা সমস্যাটি কত বড় সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধোঁয়াসা থাকলেও বর্তমানে তা পরিস্কার। ২০১৬ সালে পরিচালিত জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য ও মাতৃত্বজনিত অসুস্থতা সম্পর্কিত জাতীয় সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে মহিলাজনিত ফিস্টুলা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ১৯,৫০০। অর্থাৎ বাংলাদেশে জীবনে একবার অন্তত বিয়ে হয়েছে এমন প্রতি ১০ হাজার নারীর মধ্যে ৪ জন নারী ফিস্টুলা রোগে ভুগছেন। 

জাতিসংঘ এই প্রজন্মেই ফিস্টুলা অবসানের লক্ষ ঘোষণা করেছে। এর সরল অর্থটি হলো- ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে ফিস্টুলা মুক্ত করা। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের এই লক্ষের আলোকে নির্দিষ্ট কৌশলগত লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে। লক্ষ্যমাত্রাটি হলো- ২০৩০ সাল থেকে আর কেনো মহিলা নতুন করে প্রসবজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্ত হবেন না। আর যারা বর্তমানে ফিস্টুলায় আক্রান্ত আছে, সেটি প্রসবজনিত হোক আর অস্ত্রপচারজনিত হোক তাদের সবাইকে অপারেশনের আওতায় এনে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। যেসব ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসার পর ভালো হয়ে গেছে তাদের মধ্যে যাদের পুনর্বাসন সুবিধা দরকার তাদের জন্য পুনর্বাসন সুবিধা নিশ্চিত করা। যারা পরিবার অথবা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তাদের পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করা। যে সব মহিলাদের চিকিৎসার পর ভালো হয় নাই বা আর ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও নাই তাদের জন্য একটি ধারাবাহিক সেবার ব্যবস্থা করা।

জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত লক্ষ অর্জনে কিশোরী মেয়েরাও বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। নির্বাচিত এলাকার কিশোরী মেয়েরা তাদের গ্রামে আর কোনো মহিলা যাতে ফিস্টুলা আক্রান্ত হতে না পারে সেজন্য তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করে। জরিপের সময় তারা গর্ভবতী মহিলাদের তালিকা করে। এক্ষেত্রে তারা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীর সহযোগিতাও নিয়ে থাকে। তালিকা করনের পর গর্ভবতী মহিলার সবথেকে নিকটতম কিশোরী মেয়ের সাথে পরিচয করিয়ে দেয় যে পরবর্তীতে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। 

“এই প্রজন্মেই ফিস্টুলার হোক অবসান” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে পড়ুয়া কিশেরী মেয়েরা ফিস্টুলা প্রতিরোধে অত্যন্ত সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে ফিস্টুলা মুক্ত করার জন্য একটি সামগ্রিক সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। এই আন্দোলনে আপনিও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশকে একটি ফিস্টুলা মুক্ত সুস্থ জাতি উপহার দিতে এগিয়ে আসুন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *