জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাব রিপোর্ট নিয়ে বিএসটিআই প্রশ্ন তোলায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য ও পশুর খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপকরণ রয়েছে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) প্রতিবেদন নিয়ে বিএসটিআই প্রশ্ন তোলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। এর আগে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) করা গবেষণার পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে ল্যাবটির প্রধান প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসী তার ব্যাখ্যা প্রদান করেন। ব্যাখ্যা শোনার পর আদালত সারাদেশ থেকে পাস্তুরিত দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্য ও পশু খাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ এবং তা পরীক্ষা করে আগামী ২৩ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে চারটি উৎস স্তরসহ ঢাকা ওয়াসার ৩৪টি পয়েন্টের নমুনা সংগ্রহ করে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান আদালতে তার মতামত তুলে ধরার পর আদালত এ আদেশ প্রদান করেছে। আগামী ২ জুলাই পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য ও পশুর খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপকরণ রয়েছে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) প্রতিবেদন নিয়ে বিএসটিআই প্রশ্ন তোলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। বিএসটিআইর আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনারা (বিএসটিআই) কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন, কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনাদের পরীক্ষায় সত্য উদঘাটন হচ্ছে না কেন? শুধু এসি রুমে বসে থাকবেন তা হবে না। আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু আপনারা পারছেন না কেন? মঙ্গলবার বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইর পক্ষে ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান (মামুন), দুদকের পক্ষে সৈয়দ মামুন মাহবুব, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।

এর আগে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) করা গবেষণার স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দিতে সংস্থাটির প্রধান প্রফেসর ড. শাহনীলা ফেরদৌসী আদালতে হাজির হন। তিনি আদালতকে বলেন, আমাদের পরীক্ষার ফল সঠিক আছে কিনা, তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাচাই করা হয়। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রেও সেটা করা হয়েছে। শুনানিকালে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরিতে নমুনা সংগ্রহ ও তা পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএসটিআইয়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। আদালত বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠিত। এ প্রতিষ্ঠান তার পদ্ধতিতে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য ও পশুখাদ্য পরীক্ষা করেছে।

আদালত বিএসটিআইর আইনজীবী সরকার এম আর হাসানকে উদ্দেশ করে বলেন, অন্যের পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আপনারা নিজেরা কেন পরীক্ষা করেন না? আপনারা কি এতদিনেও পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে পারলেন না? কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন, কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন না। আপনাদের পরীক্ষায় সত্য উদঘাটন হচ্ছে না কেন? শুধু এসি রুমে বসে থাকবেন, তা হবে না। আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু আপনারা পারছেন না কেন? এ পর্যায়ে বিএসটিআইয়ের আইনজীবী যৌথ টিম গঠনের মাধ্যমে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার নির্দেশনা চান। পরে সারাদেশের বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য ও পশুর খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণসহ জরিপ করে একটি তালিকা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে গৃহীত আইনী পদক্ষেপ প্রতিবেদন আকারে দাখিল করেতে পুনরায় নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে।

৩৪ পয়েন্টে ওয়াসার পানি পরীক্ষার নির্দেশ ॥

চারটি উৎস স্তর সহ ঢাকা ওয়াসার ৩৪টি পয়েন্টের নমুনা সংগ্রহ করে পানি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান আদালতে তার মতামত তুলে ধরার পর মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী ২ জুলাই পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটি বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআরবির ল্যাবে ওয়াসার খরচে পানি পরীক্ষা করবে। ৩৪টি পয়েন্ট হচ্ছে চারটি উৎস স্তর, ১০টি জোন, ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১০টি র‌্যান্ডম (দৈবচয়ন) এলাকা। ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান আদালতের নির্দেশে গঠিত ওয়াসার পানি পরীক্ষা কমিটির সদস্য। আদালতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন তানভীর আহমেদ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *