২৫ টাকার ইনজেকশন ৩ হাজার টাকা!

ভোলা থেকে বরিশালে চিকিৎসা করাতে এসে দালাল নির্ভর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের খপ্পড়ে পড়েছেন দুই অসহায় রোগী। হাতের ব্যথার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে এক রোগীকে। আর মাত্র ২৫ টাকা মূল্যের নিউরো-ভি ইনজেকশন পুশ করে আরেক রোগীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সব রোগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করা ডা. নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল নগরীর জর্ডন রোডের সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় প্রতারিত ওই দুই রোগী প্রতারণার বিচারের দাবিতে বরিশালের জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল এসেসিয়েশন, বরিশাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বরিশাল প্রেসক্লাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।ভুক্তভোগী রোগী শাহজাহানের ছেলে মো. জুয়েল জানান, তার দিনমজুর বাবা (শাহজাহান) গত কয়েক দিন ধরে শারীরিক অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার করে বরিশালে আসেন মঙ্গলবার। সাথে হাতে ব্যথা পাওয়া প্রতিবেশী শাহনুর বেগমকেও ডাক্তার দেখাতে বরিশাল নিয়ে আসেন তারা।
সকালে লঞ্চযোগে বরিশাল নদী বন্দরে নেমে তারা অটোরিক্সাযোগে বান্দ রোডের রাহাত-আনোয়ার হাসপাতালের কর্নধার ডা. আনোয়ার হোসেনের কাছে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে অজ্ঞাতনামা অটোরিক্সা চালক তাদের বলেন, ‘ডাঃ আনোয়ার স্যার বিদেশে গেছেন তিনি বরিশাল নেই, তার অনুপস্থিতিতে তার সকল রোগী ডা. নাজমুল হোসেন দেখেন’ বলে তাদের জর্ডন রোডের সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। পরে ডা. নাজমুল ৬শ’ টাকা করে মোট ১ হাজার ২শ’ টাকা ভিজিট নিয়ে দুইজনের ব্যবস্থাপত্রে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেন। ওই ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষার নামে সেখানকার কর্তৃপক্ষ শাহজাহানের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫শ’ এবং শাহানুর বেগমের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেন। এর মধ্যে ডান হাতে ব্যথায় আক্রান্ত শাহানুর বেগমকে আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা দেন।

পরীক্ষার রিপোর্ট বের হওয়ার পর ডা. নাজমুল রোগী শাহজাহানকে কিডনী আক্রান্ত বলে তাকে একটি ইনজেকশন পুশ করার প্রয়োজনীতার কথা বলেন। এ সময় ২৫ টাকা মূল্যের একটি নিউরো-ভি ইনজেকশন পুশ করে রোগীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এ সময় ইনজেকশনের খালী বোতল সংগ্রহ করেন রোগীর স্বজনরা।

এদিকে শাহানুরের সকল রিপোর্ট ভালো উল্লেখ করলেও তার ব্যবস্থাপত্রে ৭ ধরনের ওষুধ লিখে দেন ডা. নাজমুল। বিকেলে ওই ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে একটি ফার্মেসীতে গিয়ে ওই ইনজেকশনের খালি বোতল দেখিয়ে জানতে পারেন নিউরো-ভি ইনজেকশনের দাম মাত্র ২৫ টাকা। তখন তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, তিনি শুধুমাত্র ভিজিটের ১ হাজার ২শ’ টাকা পেয়েছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার টাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ২৫ টাকা মূল্যের নিউরো-ভি ইনজেকশন বাবদ ৩ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আবার ব্যবস্থাপত্রে নিজেকে এমবিবিএস (ঢাকা) পাশ ছাড়াও মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলজি, বাতব্যথা, হার্ট, ষ্ট্রোক, নাক, কান, গলা, বক্ষব্যাধি, চর্ম, যৌন রোগে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত উল্লেখ করলেও একজন চিকিৎসক এতগুলো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারে না বলে তিনি স্বীকার করেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *