‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন-২০১৯’-এর খসড়া চূড়ান্ত

সরকারি হাসপাতাল প্রদত্ত সেবা এবং রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য বা ফি পৃথকভাবে নির্ধারণ করবে। চিকিৎসকের ফি, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য বা ফি’র তালিকা হাসপাতালের বা চেম্বারের দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। চিকিৎসাসেবা বাবদ আদায়কৃত চার্জ বা মূল্য বা ফি রসিদের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। এমন সব বিধান রেখে ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন-২০১৯’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। প্রস্তাবিত আইনটির মতামতের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

প্রস্তাবিত আইনটির আগে নাম ছিল ‘রোগী সুরক্ষা আইন’। ওই খসড়ায় বলা ছিল, অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় মামলা করা যাবে। কিন্তু বর্তমান খসড়ায় এই অংশটুকু বাদ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, বেসরকারি কোনো হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র সরকারি চাকরিতে কর্মরত কোনো ব্যক্তিকে অফিস সময়ে সেবা প্রদানের জন্য নিয়োগ করতে পারবে না। সরকারি চাকরিতে কর্মরত চিকিৎসক নির্ধারিত অফিস সময়ে বেসরকারি হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসাসেবা দিলে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। একইভাবে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠান সরকারি ডাক্তারকে তার প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখার সুযোগ দিলে ওই প্রতিষ্ঠান বা মালিককে ৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হবে। এতে বলা হয়েছে, সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনমূলে সরকারি হাসপাতাল প্রদত্ত সেবা এবং রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য বা ফি পৃথকভাবে নির্ধারণ করবে। চিকিৎসকের ফি, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য বা ফি’র তালিকা হাসপাতালের বা চেম্বারের দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। চিকিৎসাসেবা বাবদ আদায়কৃত চার্জ বা মূল্য বা ফি রসিদের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। সেবাগ্রহীতা বা তার অভিভাবককে ওই রসিদের অনুলিপি প্রদান করতে হবে।

ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে রোগ পরীক্ষার ন্যূনতম চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি ছাড়া অন্য কোনো ডিগ্রির বিবরণ সাইনবোর্ড বা নামফলক বা ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ করা যাবে না। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও ভিজিটিং কার্ডে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর লেখা থাকতে হবে। মহিলা রোগীর পরীক্ষার জন্য মহিলা নার্স বা সহায়ক থাকতে হবে। তবে জটিল পরিস্থিতিতে যৌক্তিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই শর্ত শিথিলযোগ্য।

স্বাস্থ্যসেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সহিংস কাজ করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সেবাদানকারী ও প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট করা, ধ্বংসের মতো অপরাধের শাস্তি তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। বেসরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে জরুরি সেবা প্রদানের ব্যবস্থা না থাকলে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম শাস্তি ভোগ করতে হবে। চিকিৎসা কেন্দ্রে যদি রোগীর বসার স্থান না থাকে তা হলে ডাক্তারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। সেবাগ্রহীতাকে টাকার রসিদ না দিলে বা সার্ভিস চার্জ মূল্য হাসপাতালে সংরক্ষণ করা না হলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে। এই আইনের যে কোনো ধারা লঙ্ঘন করলে বা লঙ্ঘনে প্ররোচনা দিলে বা সহযোগিতা করলে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *